রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় পুকুরে মাছ ধরতে বাঁধা দেওয়ায় শামসুল হক নামের এক পাহারাদারকে মারাত্মক জখম করে প্রতিপক্ষসহ তাদের ভাড়াটিয়া লোকজন। এ ঘটনায় শামসুল হক বাদী হয়ে হেলিম আলীসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাতনা ১০/১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আশরাফ দেওয়া নামের এক আসামির জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান আদালত। অন্যান্য আসামিরা জামিন নেয়। গ্রামবাসীর অভিযোগ নিজেদের অপরাধ ধামাচাপা দিতে এবং মামলা থেকে বাঁচতে মারপিটের নাটক সাজিয়ে শামসুল হকসহ এলাকায় সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানার অভিযোগ দায়ের করেন এজারভুক্ত মামলার আসামি হেলিম আলী। রোববার (৬ জুলাই) বিকেলে কালিগাঁও খাজুরা মাদ্রাসার সামনে উক্ত ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন গ্রামবাসী। একই সাথে মারপিটের ঘটনায় সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে থানার অভিযোগের বিষয়ে সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা। এলাকাবাসী ও মামলার সূত্রে জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার কালিগাঁও বিলে আপন ভাই ফজলুল রহমানের পুকুর পাহারা দেন কালিগাঁও খাজুরা গ্রামের শামসুল হক। গত ১৪ মার্চ বেলা সাড়ে ১১ টার সময় মামলার এজাহারভুক্ত আসামি একই উপজেলার বজরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ খানের ছেলে শাহিন সাগর পল্টু খান, আলিমুদ্দিন খান, আনছার দেওয়ানের ছেলে আশরাফ দেওয়া, কালিগাঁও খাজুরা গ্রামের আবুল কাশেম পালু, ছেলে হেলিম আলীসহ তাদের ভারাটিয়া লোকজন নিয়ে ফজলুল রহমানের পুকুরে জোর করে মাছ ধরতে যায়। ওই সময় পাহারাদার শামসুল হক বাঁধা দিলে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন আসলে প্রতিপক্ষ আবুল কাশেম পালু ছেলে হেলিম আলীসহ তাদের ভাড়াটিয়া লোকজন বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে চলে যায়। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৫ টার সময় মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরাসহ তাদের ভাড়াটিয়া ১০/১৫ জন লোক মিলে কালিগাঁও খাজুরা গ্রামের জনৈক আমজাদ আলীর বাড়ির কাছে পাহারাদার শামসুল হককে হত্যার উদ্দেশ্যে বেদম মারপিটের পর মারাত্মক জখম করে ত্রিমোহনী-কালিগঞ্জ রাস্তার উপর ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন আহত অবস্থায় শামসুল হককে উদ্ধার করে প্রথমে মোহনপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ রামেক হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে চোখে মারাত্মক আঘাতের কারণে চিকিৎসার জন্য ঢাকা আগারগাঁও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে হস্তান্তর করা হয়। চিকিৎসা শেষে গত ২৫ মার্চ পাঁচজনের নাম উল্লেখ্যসহ ১০/১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে শামসুল হক বাদি হয়ে রাজশাহীর মোহনপুর থানার বিজ্ঞ আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য মোহনপুর থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন। বর্তমানে মামলাটি মোহনপুর থানা পুলিশ তদন্ত করেছে। হঠাৎ করে গত ২৮ জুন দুপুরে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হেলিম আলী নিজেদের অপরাধ ধামাচাপা দিতে মারপিটের একটি নাটক সাজিয়ে শামসুল হকসহ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। মানববন্ধনে উপস্থিত রনি হাসান, পারভেজ ইসলাম, মনজু রহমান, আফছার আলী দেওয়ানসহ আরও অনেকে বলেন, ওইদিন ঘটনার পূবে হেলিম আলী সিএনজিতে যোগে গ্রাম থেকে সুস্থ অবস্থায় চলে যায়। মূলত শামসুল হকের মামলা থেকে বাঁচতে মারপিটের নাটক সাজিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে এর সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। মামলার বাদী শামসুল হক বলেন, আমার করা মামলা থেকে বাঁচতে আসামিপক্ষ হেলিম আলী মারপিটে নাটক সাজিয়েছে। এলাকাবাসীর কাছেই জিজ্ঞাসা করেন তারাই প্রকৃত ঘটনা বলবে। এই ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার চাই। অপর মামলার বাদী হেলিম আলীর কাছে মারপিটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি। তারাই আমাকে মারপিট করে আহত করেছে। মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আতাউর রহমান বলেন, থানায় দুই পক্ষের মামলা হয়েছে। দুটি মামলার তদন্ত চলছে। নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়। সঠিক তদন্ত করে আদালতে চার্জসিট প্রেরণ করা হবে।