যুদ্ধবিরতির মধ্যেই চীনের ক্ষেপণাস্ত্র পেল ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ৮ জুলাই, ২০২৫, ০৫:২৯ পিএম
যুদ্ধবিরতির মধ্যেই চীনের ক্ষেপণাস্ত্র পেল ইরান

ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের তুমুল সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় চীনের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ভূমি-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হাতে পেয়েছে ইরান। এই ঘটনা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিবেশকেই নতুন করে নাড়িয়ে দিয়েছে, বরং তেহরান-বেইজিং সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের একাধিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এক আরব গোয়েন্দা কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর ২৪ জুন চীনের তৈরি এইচকিউ-৯বি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তেহরানে পৌঁছেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে ইরান। যদিও ইরান ঠিক কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র বা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা সংগ্রহ করেছে, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য জানাননি তিনি। তবে আরেক আরব কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই অস্ত্রের মূল্য চীনের কাছে ইরান তেলের মাধ্যমে পরিশোধ করছে।

তেলের বিনিময়ে অস্ত্র কেনার বিষয়টি ইরান-চীন সম্পর্কের আরেকটি দিককে সামনে এনেছে। মার্কিন জ্বালানি তথ্য সংস্থার মে মাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ অপরিশোধিত তেল ও কনডেনসেট রপ্তানি হচ্ছে চীনে। এই বিপুল তেল বাণিজ্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং। তেলের উৎস গোপন রাখতে চীন মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোকে ট্রানশিপমেন্ট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, চীনের কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের এ চালান সরাসরি ইরান-চীন কৌশলগত সম্পর্কের গভীরতাকে প্রকাশ করছে। যদিও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক যুদ্ধে চীন বা রাশিয়া কোনো সরাসরি সামরিক সহযোগিতা দেয়নি। ১২ দিনের সেই যুদ্ধে ইসরায়েল ইরানের আকাশে প্রভাব বিস্তার করে এবং সুপরিকল্পিত হামলায় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যায় সক্ষম হয়।

তবে ইরানও পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের তেল আবিব ও হাইফার বেশ কিছু সংবেদনশীল স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। যুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় উভয় দেশ ২৪ জুন থেকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

ইরান অতীতে চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম আমদানির দীর্ঘ ইতিহাস রাখে। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে উত্তর কোরিয়ার মাধ্যমে চীন থেকে এইচওয়াই-২ সিল্কওয়ার্ম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করেছিল ইরান। ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে তারা ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের সময় কুয়েত ও একটি মার্কিন পতাকাবাহী তেল ট্যাংকারে হামলা চালিয়েছিল।

২০১০ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান চীনের কাছ থেকে এইচকিউ-৯ বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পায়। বর্তমানে ইরান রাশিয়ার তৈরি এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করছে, যা বিমান, ড্রোন এবং কিছু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম। পাশাপাশি চীনের তৈরি পুরোনো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, নিজস্ব প্রযুক্তির খোরদাদ সিরিজ এবং বাভার-৩৭৩ নামের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও ইরানের অস্ত্রভান্ডারে রয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলের ব্যবহৃত মার্কিন এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান প্রতিরোধে সীমিত সক্ষম। ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানে হামলায় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে, চীন ইতিমধ্যে এইচকিউ-৯ ও এইচকিউ-১৬ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পাকিস্তান ও মিশরের মতো দেশগুলোর কাছে বিক্রি করেছে।

এইচকিউ-৯বি এখনো কোনো প্রকৃত যুদ্ধে ব্যবহার হয়নি। তবে চীনা সামরিক মহড়ায় স্টেলথ যুদ্ধবিমান, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও উচ্চ গতির লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে বলে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে।

চীনের কাছ থেকে নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রের চালান ইরান-ইসরায়েল সংঘাত পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন তেহরানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির এ প্রচেষ্টার দিকে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে