ধানমন্ডিতে সাবেক সচিব-অফিসারদের ১২টি ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৮ জুলাই, ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম
ধানমন্ডিতে সাবেক সচিব-অফিসারদের ১২টি ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল

ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমন্ডিতে সরকারি প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের স্ব-অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘ঢাকার ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরস্থ বিভিন্ন পরিত্যক্ত বাড়িতে আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (গৃহায়ন ধানমন্ডি) (১ম পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার সড়ক নং-১৩ (নতুন-৬/এ), বাড়ি নং-৭১১ (নতুন-৬৩) নম্বরের ওপর নির্মাণাধীন ভবনের মোট ১৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১২টি ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ফ্ল্যাটগুলোর ৬০ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য এবং বাকি ৪০ শতাংশ বেসরকারি ক্রেতাদের জন্য নির্ধারিত ছিল।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এবং সংস্থাটির ২৭৪তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গৃহায়ন প্রকল্পের এসব বরাদ্দ নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এমনকি এর সঙ্গে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেরও যোগ রয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

দুদক জানায়, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত’ থাকা অভিযোগে সচিব পদমর্যাদার ১২ জন কর্মকর্তাকে ‘পুরস্কৃত করতে’ এ ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে গত ৫ মে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশের পর দুদক অনুসন্ধানে নামে।

যাদের ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে, তারা হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মো. জহুরুল হক (ফ্ল্যাটের আয়তন চার হাজার ১০৫ দশমিক শূন্য পাঁচ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান (ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার ৩১৫ দশমিক ৮৩ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান (ফ্ল্যাটের আয়তন চার হাজার ৩০৮ দশমিক ৬৮ বর্গফুট), সাবেক সচিব এম এ কাদের সরকার (ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার ৪৯ দশমিক ১৩ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব ড. এম আসলাম আলম (ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার ৪৯ দশমিক ১৩ বর্গফুট), সাবেক সচিব আকতারী মমতাজ (ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার ৪৯ দশমিক ১৩ বর্গফুট), সাবেক সচিব মো. সিরাজুল হক খান (ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার ৩১৫ দশমিক ৮৩ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ (ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার ৩১৫ দশমিক ৮৩ বর্গফুট), সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম (ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার ৪৯ দশমিক ১৩ বর্গফুট), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ (ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার ৪৯ দশমিক ১৩ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব ও নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান (ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার ৩১৫ দশমিক ৮৩ বর্গফুট) এবং সাবেক সিনিয়র সচিব এস. এম. গোলাম ফারুক (ফ্ল্যাটের আয়তন দুই হাজার ৪৯ দশমিক ১৩ বর্গফুট)।

গৃহায়ন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নীতিমালা লঙ্ঘন, বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং প্রভাব খাটানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এই বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখন সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও দুদকের নজরদারিতে রয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে