পন্টেজ চার্জ আরোপের মাধ্যমে ভাড়া বাড়াতে যাচ্ছে রেলওয়ে

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ৯ জুলাই, ২০২৫, ০৮:১০ এএম
পন্টেজ চার্জ আরোপের মাধ্যমে ভাড়া বাড়াতে যাচ্ছে রেলওয়ে

পন্টেজ চার্জ আরোপের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভাড়া বাড়াতে যাচ্ছে। ওই লক্ষ্যে এবার ১০০ মিটারের ঊর্ধ্বে রেল সেতু ও ভায়াডাক্টে চার্জ যুক্ত করে আয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্রিটিশ আমলের আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের নিয়মানুযায়ী সেতুতে এক্সট্রা ডিসট্যান্স অব পন্টেজ চার্জ (রক্ষণাবেক্ষণ মাশুল) আরোপের নিয়ম রয়েছে। তবে এতোদিন রেলওয়ে ভাড়ার সঙ্গে শুধু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, যমুনা সেতু, ভৈরব ও ব্রহ্মপুত্র সেতু থেকে সরল দূরত্বের অতিরিক্ত পন্টেজ চার্জ আদায় করতো। আর সর্বশেষ পদ্মা সেতুতে ট্রেন সার্ভিস চালুর সময় পন্টেজ চার্জ ছাড়াও ভায়াডাক্টের পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হয়। ওই সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পন্টেজ দূরত্ব হিসাবে ১৫৪ কিলোমিটার এবং গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার ফ্লাইওভার পন্টেজ দূরত্ব হিসাবে ১১৫ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ চালুর সময় ৬টি সেতুতে একই চার্জ যুক্ত করে রেলওয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বাণিজ্যিক দূরত্ব নির্ধারণ করেছিল। ১০০ কিলোমিটার ওই রেলপথের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৬টি ১০০ মিটারের বড় সেতুর জন্য পন্টেজ চার্জ যুক্ত করে। ফলে বেড়েছে রেলের ভাড়া। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩ হাজার ৬৫০টির বেশি রেল সেতু রয়েছে। তার মধ্যে ৩ হাজার ১০৪টি মেজর ও ৫৪৬টি নন-মেজর। ১০০ মিটার বা তার ঊর্ধ্বের সেতুগুলোর ওপর রেলওয়ে প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার হিসাবে বাণিজ্যিক ভাড়া আরোপের পরিকল্পনা করছে। আর তা বাস্তবায়ন হলে রেলপথের প্রকৃত দূরত্বের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে বাণিজ্যিক দূরত্ব। এরই মধ্যে পন্টেজ চার্জ আরোপের মাধ্যমে ভাড়া বাড়াতে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সংস্থাটির দুটি অঞ্চলের প্রকৌশল ও সেতু বিভাগকে ১০০ মিটার বা তার ঊর্ধ্বে থাকা সেতুর তালিকা পাঠাতে চিঠি দেয়া হয়েছে। তালিকা পেলে বাণিজ্যিক বিভাগ পন্টেজ চার্জ যুক্ত করে নতুন বর্ধিত ভাড়ার চার্ট করবে। আর রেলের পরিকল্পনা রয়েছে চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রথম প্রান্তিক থেকেই বর্ধিত ভাড়া আদায়ের। বর্তমানে রেলওয়ে কিলোমিটারপ্রতি নন-এসি টিকিটের ভাড়া ১ টাকা ১৭ পয়সা আদায় করে। আর এসি টিকিটের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা এবং প্রথম শ্রেণী ও এসি টিকিটের ক্ষেত্রে যাত্রীরা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করে।

সূত্র জানায়, বিগত ২০১৬ সালের পর বাংলাদেশ রেলওয়ে কয়েক দফা ভাড়া বাড়ানোর পরিকল্পনা করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে সংস্থাটির আয়-ব্যয় অনুপাত ক্রমেই বাড়ছে। সেজন্য রেলওয়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন খাতে আয় বাড়াতে বিকল্প উপায় খুঁজছে। যদিও একসময় রলওয়েতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ছিল সক্ষমতার তুলনায় অনেক কম। সেজন্য যাত্রী ও পণ্য পরিবহন আকৃষ্ট করতে ১৯৯২ সালে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে অধিক যাত্রী পরিবহনে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি (ছাড়) প্রদান করা হতো। তবে বিগত ২০১২ সালে রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধির সময় বাতিল করা হয় সেকশনাল রেয়াত। আর দূরত্বভিত্তিক রেয়াত বহাল থাকায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ভ্রমণকারী যাত্রী ও পরিবাহিত পণ্যে তুলনামূলক কম ভাড়া পড়তো। কিন্তু গত বছরের মে মাসে ওই সুবিধাও প্রত্যাহার হওয়ায় ১০১-২৫০ কিলোমিটারে ভাড়া ২০ শতাংশ, ২৫১-৪০০ কিলোমিটারে ২৫ শতাংশ ও ৪০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ট্রেনের ভাড়া বেড়ে যায়। এখন দেশের সব ১০০ মিটারের অধিক সেতু ও ভায়াডাক্টের পন্টেজ চার্জ আরোপ হলে ট্রেনের ভাড়া বাড়বে উল্লেখযোগ্য হারে।

সূত্র আরো জানায়, গত মে রেলওয়ের আয় বৃদ্ধি ও ব্যয় হ্রাস বা অপারেটিং রেশিও কমাতে একটি বিশেষ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে রেলওয়ের টিকিটের ভাড়া না বাড়িয়ে কীভাবে আয় বাড়ানো যায় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। সভায় ১৩টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার মধ্যে প্রথমেই রেলের ১০০ মিটার বা তার ঊর্ধ্বে বিদ্যমান সেতুর ওপর পন্টেজ চার্জ আরোপের বিষয়টি রাখা হয়। বর্তমানে রেলের ১ টাকা আয়ের বিপরীতে আড়াই টাকারও বেশি ব্যয় হয়। বর্তমান সরকার ১ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় ২ টাকার নিচে নামিয়ে আনতে নির্দেশনা দিয়েছে। ওই লক্ষ্যে রেলের ভূমির ইজারা মূল্য বৃদ্ধি, ভূমি উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক ব্যবহার, অযাচিত ব্যয় কমানোর দিকে নজর দেয়া হয়েছে। তবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, দেশের বিভিন্ন গণপরিবহনের তুলনায় অনেক কম রেলের ভাড়া। সেবাধর্মী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেলওয়ে নিয়মিত ভাড়া বাড়ায় না। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি বিবেচনার পাশাপাশি আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের পার্থক্য কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে আগের নিয়মে থাকা বেশকিছু সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেজন্য ১০০ মিটারের বড় সেতু ও ভায়াডাক্টে পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হবে। তাতে রেলের ভাড়া কিছুটা বাড়বে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে