সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আলোচিত ও কুখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা, হত্যা, চাঁদাবাজি এবং জলমহাল দখলসহ একাধিক মামলার আসামি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রদীপ রায় অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকার লন্ডনি রোডের একটি ভাড়া বাসা থেকে স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে। পরে খবর পেয়ে জালালাবাদ থানা পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।
প্রদীপ রায়কে আটকের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, উপস্থিত জনতা তাকে ‘ডেভিল’ আখ্যা দিয়ে ধরে ফেলায় স্বস্তি প্রকাশ করছে।
রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে প্রদীপ রায় ছিলেন দিরাই ও শাল্লা উপজেলার অঘোষিত নিয়ন্ত্রক। সুনামগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রী জয়া সেগুপ্তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত প্রদীপ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রশাসন ও দলে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁর ছত্রছায়ায় টিআর-কাবিখা প্রকল্প, ফসলরক্ষা বাঁধ এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্য ছিল নিয়মিত ঘটনা।
জলমহাল ও ফিসারিজ দখল নিয়ে সৃষ্ট সঙ্ঘর্ষের পেছনে প্রদীপ রায় ছিলেন মূল হোতা। ঘোড়ামারা সাতপাকিয়া, জারালিয়া, মেঘনা বারোঘর ও উদীর হাওরের মালিকানা নিয়ে সংঘর্ষে বহুবার রক্ত ঝরেছে। অন্তত চারটি হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে জারালিয়া জলমহাল দখল নিয়ে সংঘর্ষে নিহত হয় তিনজন-যা 'ত্রিপল মার্ডার' মামলা হিসেবে দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
এছাড়াও, উদীর হাওর জলমহাল দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন রুহেদ নামে এক যুবক। নিহতের ভাই বাদী হয়ে প্রদীপ রায়সহ ৭৩ জনকে আসামি করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেন।
জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ জানান, “প্রদীপ রায়কে স্থানীয়দের সহায়তায় আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জে একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা তাকে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছি।”