'সুন্দরবন শুধুমাত্র একটি বনভূমি নয়, এটি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই বন বাঁচলে দেশের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং উপকূলীয় জনগণের জীবনও নিরাপদ থাকবে'। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বুধবার সন্ধ্যায় সুন্দরবন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক অনলাইন মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। সভায় রিজওয়ানা হাসান তার বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, 'সুন্দরবন রক্ষায় একক বা খণ্ডিত উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। বন বিভাগ, নৌবাহিনী, র্যাব, কোস্ট গার্ড, বিজিবি, পুলিশ এবং স্থানীয় জনগণসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র সম্মিলিত প্রয়াসেই সুন্দরবনকে সব ধরনের অপরাধ থেকে রক্ষা করা সম্ভব'।
সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা সুন্দরবনকে ঘিরে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে স্থানীয় জনগণের জীবিকা, বনদস্যুতা, হরিণ শিকার, প্লাস্টিক দূষণ, অগ্নিকাণ্ড, বিষ দিয়ে মাছ ধরা, অবৈধ প্রবেশ ও নৌযান চলাচল ইত্যাদি সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি এসব সমস্যার টেকসই সমাধানে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
রিজওয়ানা হাসান আরও জানান, সুন্দরবনের সুরক্ষায় বর্তমানে টাইগার রেসপন্স টিম, ডলফিন টিম এবং বিভিন্ন পেট্রোল ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি, তিনি ইকো-ট্যুরিজম সংক্রান্ত গাইডলাইন এবং সুন্দরবন ভ্রমণ নীতিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করার ওপর জোর দেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী এবং খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. ইমরান আহমেদ, যিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এ ছাড়া সভায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, র্যাব, কোস্ট গার্ড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন এবং মতামত প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন যেখানে বাস করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণসহ প্রায় ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলের লাখো মানুষের ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এই বন। অথচ আজ নিজেই টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত সুন্দরবন।
বন অধিদফতরের তথ্যানুসারে, দেশের মোট সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ শতাংশই সুন্দরবনের অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ৬,১১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বনাঞ্চলে রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির বৃক্ষ। নদ-নদীতে পাওয়া যায় বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন এবং ২১০ প্রজাতির মাছ।
তবে এই জীববৈচিত্র্যময় বন আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীর লবণাক্ততা, শিল্পবর্জ্য ও প্লাস্টিক দূষণ, বন্যপ্রাণী শিকার এবং কাঠ পাচার- এসব কারণেই ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন।
বন বিভাগের মতে, প্রতিনিয়ত কমছে জীববৈচিত্র্য, বদলে যাচ্ছে আবাসস্থলের বৈশিষ্ট্য। বিপন্ন হয়ে পড়ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য।
সুন্দরবনের গুরুত্ব ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় সুন্দরবন দিবস।