ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

এম এম মামুন; রাজশাহী | প্রকাশ: ১২ জুলাই, ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে চাঁদা না দেওয়ায় এক ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই জায়গায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় তারা 'আমার সোনার বাংলায়, খুনিদের ঠাঁই নাই', 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ, এক দুই তিন চার চাঁদাবাজ দেশ ছাড়, চাঁদাবাজের ঠিকানা এই বাংলা হবে না', 'জনে জনে মানুষ মরে ইন্টেরিম কি করে', 'লীগ গেছে যেই পথে দল যাবে সেই পথে' এমনসব স্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলেন পুরো ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাইয়ের পর থেকে আমরা দুইটি সংস্কার সবচেয়ে বেশি চেয়েছি। একটি‌ মিডিয়া সংস্কার, অন্যটি প্রশাসনের সংস্কার। ৪৮ ঘন্টা পর এই ঘটনা কেন আমাদের সামনে আসলো? চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে যারা একজন ব্যবসায়ীকে হত্যা করে, ক্ষমতায় আসার পরে তাঁদের পথের কাঁটা আজকের জুলাই যোদ্ধারাই হবে। তারা আরো বলেন, যারা দলমত নির্বিশেষে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, সেই জুলাই যোদ্ধারাও তাদের হামলা থেকে নিস্তার পাবে না। ইন্টেরিম সরকারের কাছে বিচার চাইতে চাইতে আমরা নাজেহাল হয়ে গেছি। একটা দলের হাইকমান্ড থেকে এই ব্যাপারটা নিয়ে উল্টো ন্যারেটিভ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীরা আরো বলেন, আপনারা সবাই অবগত আছেন জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে কি পরিমাণ নৃশংসতার সাক্ষী এ দেশের মানুষ হয়েছে। আজকে যে হত্যাকান্ডের জন্য আমরা এখানে সমাবেত হয়েছি– আমি সেই হত্যাকারী যুবদলের নাম স্পষ্ট করে বলতে চাই। এ বাংলাদেশে আপনাকে দলের নাম ধরে সমালোচনা করা শিখতে হবে। তারা বলেন, যদি সমালোচনা না করেন তবে প্রত্যেকে আবার হাসিনা হয়ে উঠবে, আওয়ামী লীগ হয়ে উঠবে। তাই এই বাংলাদেশে জুলাই যতোদিন বেচে থাকবে ততোদিন এ দেশে আবার কোনো আওয়ামী লীগ হয়ে উঠতে দেবো না। সেটা বিএনপি হোক, জামাত হোক বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল হোক– কোনোভাবেই এ দেশে আর কোনো সন্ত্রাসবাদ কায়েম হতে দেবো না। দেশে আর কোন ফ্যাসিবাদ কায়েম তৈরি হতে দিবো না। জুলাই বিপ্লবের পর দেশে আর কোন চাঁদাবাজি মেনে নেওয়া যায় না। তারেক রহমান বিদেশে বসে কি খেলা দেখছেন? তার দল জুলাইয়ের পর দেশে খুনের সেঞ্চুরি করে ফেলছে। এই দায় তারই নিতে হবে। এদিকে রাত পৌনে ১১ টার সময় রাজধানীর পুরান ঢাকায় মো. সোহাগ (৪৩) নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।  শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত পৌনে ১১ টার সময় কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কলেজটির মূলফটকের রাস্তার পাশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে চাঁদাবাজদের হুশিয়ারি দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিগত ১৭ বছর চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলো ছাত্র-জনতা। যার সমাপ্তি ঘটানো হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে। ফের যদি কোনো চাঁদাবাজ মাথা চাড়া দেওয়ার অপচেষ্টা করে তাহলে আবারও ছাত্র-জনতা যৌথভাবে রুখে দিবে। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের এই বাংলায় কোনো ঠায় দেওয়া হবে না এবং শক্তহাতে এসব সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা হবে।  শিক্ষার্থীরা বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে যেভাবে জনসম্মুখে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটির সাথে জড়িতদের নজিরবিহীন শাস্তি চায়। যাতে ভবিষ্যতে এমন কাজ করার আগে সন্ত্রাসীরা অন্তত শতবার ভাবে। একজন মানুষকে পশুর মতো করে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা হলো। অথচ জড়িতদের এখনো অনেকে অধরা রয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে ছাত্র-জনতার হাতে দায়িত্ব দিয়ে দেন, হত্যার পরিবর্তে হত্যায় করা হবে। উল্লেখ্য গত ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে  এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।  নিহত মো. সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকার ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। ঘটনার পর পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে আটক করে। পরে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলা দায়ের হয় এবং মহিনকে ৫ দিনের ও তারেক রহমান রবিনকে ২ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।  এদিকে পাথর নিক্ষেপ করে প্রকাশ্যে সোহাগকে হত্যা করার ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুকে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে