লর্ডস টেস্টে ডিউক বলের আচরণ নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে ভারত শিবিরে। দ্রুত বলের নরম হয়ে যাওয়া এবং বারবার বল পরিবর্তনের ফলে অসন্তুষ্ট হয়েছেন ভারতের ক্রিকেটাররা। ক্ষোভ ঝেরেছেন সাবেকরাও। লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিনে একাধিকবার বল পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে থাকা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় নতুন বল নেয় ভারত। সেই বলে ভালোই করছিল ভারত। মাত্র ১৪ বলের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নেন ভারতীয় পেসার জাসপ্রীত বুমরাহ। তবে বাকি ৪৮ বলে কোনো উইকেট নিতে পারেনি ভারত। ক্রিজে জুটি গড়ে ফেলেছিলেন জেমি স্মিথ এবং ব্রাইডন কার্স। ১০.৩ ওভারেই দ্বিতীয় নতুন বলের আকার সঠিক মানের বাইরে চলে যায়। বল পরীক্ষার যে রিং সেই রিং দিয়েও বল পরীক্ষা করে দেখা হয়। পরে দ্বিতীয় নতুন বলের বদলে আরেকটি বল এনে খেলা চালানো হয়। সেখান থেকেই বিতর্কের শুরু। শুরুতে ব্যবহৃত দ্বিতীয় নতুন বলের চেয়ে বদলি বলের সুইং কমে যায় অনেকটাই। ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো জানিয়েছে, দ্বিতীয় নতুন বলে গড়ে সুইং হয়েছে ১.৮৬৯ ডিগ্রি, সিম মুভমেন্ট হয়েছে ০.৫৭৯ ডিগ্রি। বদলি হিসেবে আনা বলে সুইং হয়েছে ০.৮৫৫ ডিগ্রি, সিম অবশ্য একটু বেশি হয়েছে ০.৫৯৪ ডিগ্রি। সুইং, সিমের চেয়ে বল দ্রুত নরম হয়ে যাওয়ায় বেশি বিরক্ত হয়েছে ভারত। মাঠেই এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারতের অধিনায়ক শুবমান গিল। ভারতের দাবি, বদলি হিসেবে বেছে নেওয়া বলটি আগের বলের মত সমান পরিমাণের পুরনো ছিল না। পরবর্তীতে ৮ ওভার পরে সেই বলও পরিবর্তন করা হয়েছে। বারবার বল পরিবর্তনের ঘটনা নিয়ে ক্ষুদ্ধ দুই দেশের সাবেক ক্রিকেটাররা। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকেই ক্ষোভ ঝেরেছেন সুনীল গাভাস্কার, ‘এখান থেকে দাঁড়িয়েই দেখা যাচ্ছে, এটা কোনো ১০ ওভার বয়সী বল নয়, এটা অন্তত ২০ ওভার খেলা বলের মতো লাগছে। যদি এ ঘটনা ভারতে হতো...যদি দেখা যেত বদলি বল আগেরটার মতো না, তাহলে ব্রিটিশ মিডিয়া ব্যাপারটা নিয়ে বিশাল কাণ্ড বাঁধিয়ে দিত।’ ইংল্যান্ডের সাবেক পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড এক্সে লিখেছেন, ‘আমরা এখন খুব বেশি বল নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। এটা এত বড় একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে প্রায় প্রতিটি ইনিংসেই বল বদলাতে হচ্ছে। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। মনে হচ্ছে, এ সমস্যা চলছে পাঁচ বছর ধরে। ডিউকসের সত্যিই একটা সমস্যা আছে, ওদের এটা ঠিক করতে হবে। একটা বল ৮০ ওভার টিকে থাকার কথা, ১০ ওভার নয়।’ স্কাই স্পোর্টসে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক এবং জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইন বলেছেন, ‘প্রথমত, ডিউকস বল নিয়ে একটা গুরুতর সমস্যা আছে। ম্যাচ শুরুর আগেই দুই অধিনায়ক বিষয়টা তুলেছিলেন। এ ম্যাচেও দেখলাম, এই সেশনেই বল দুবার বদলানো হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, ডিউকস বল খুব তাড়াতাড়ি আকার হারাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আমি মনে করি, এখন খুব সহজেই আমরা বল বদলে ফেলি। বল পুরোনো হয়, নরম হয়ে যায় - এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার মনে হয় এমন এক “পারফেক্ট”বল চাইছি, যেটা ৮০ ওভার অবধি একদম একই রকম থাকবে। ওরা (ভারত) যখন প্রথম ঘণ্টায় বল করছিল, তখন বুমরাহ একেবারে অপ্রতিরোধ্য ছিল...আমি তখন স্কাইয়ের কমেন্ট্রি বক্সের পেছনে ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি, বল বদলানো হচ্ছে। তখন মনে হলো যে বলটা দিয়ে এত ভালো বোলিং হচ্ছে, সেটা রেখে এলোমেলো একটা বাক্স থেকে নতুন বল নেওয়ার কী দরকার?’ দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে জো রুট বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যদি কোনো দল বল পরিবর্তন করতে চায় তাহলে ৮০ ওভারের মধ্যে তাদেরকে ৩টি চ্যালেঞ্জের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে, এটাই, যদি পরিবর্তন করতে চান। তবে রিংকেও সঠিক আকারের হতে হবে, বেশি বড় নয়।’