জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনেই রেমিট্যান্সে বড় সাফল্য, বেড়েছে প্রবাহের গতি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৩ জুলাই, ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম
জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনেই রেমিট্যান্সে বড় সাফল্য, বেড়েছে প্রবাহের গতি

প্রবাসী আয়ে ভর করে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার আবারও শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনেই দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। রোববার (১৩ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসী আয়ের এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি। কারণ, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এ বছর প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি প্রবাসী আয় এসেছে দেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন ২৮১ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা দেশের মুদ্রায় প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। জুন মাসের এই অঙ্ক একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগের মে মাসে এসেছিল ২৯৭ কোটি ডলার এবং মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে পুরো বছরে দেশে এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় ছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। এ অঙ্ক দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের রেকর্ড তৈরি করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডি প্রতিরোধ, সরকারি প্রণোদনা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রবাসী আয়ের এই ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ। তারা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও স্বস্তি ফিরেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালের জুনে রিজার্ভের অঙ্ক ছিল ৩১ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে তা ছিল ২১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলন বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। সেইসঙ্গে রপ্তানি আয়ে ১০ শতাংশ, আমদানিতে ৮ শতাংশ এবং রেমিট্যান্সে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাই মাসের প্রথম ১২ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৫ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ডলার, কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৪ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬৭ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার ডলার। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২২ লাখ ৩০ হাজার ডলার।

রেমিট্যান্স প্রবাহের এমন ঊর্ধ্বগতি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে বড় অবদান রাখছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, প্রবাসী আয়ের এমন প্রবৃদ্ধি ডলার সংকট মোকাবিলা এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে