“গণঅভ্যুত্থনের পরও চাঁদাবাজ থাকবে, আশা করিনি”—নাহিদ ইসলাম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণঅভ্যুত্থনের পরও দেশে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব এবং সহিংসতা দেখতে হবে—এটি ছিল না জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রত্যাশা। এমন মন্তব্য করেছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

রোববার (১৩ জুলাই) পিরোজপুর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, “একটা গণঅভ্যুত্থানের পরে দেশে চাঁদাবাজ থাকবে, দখলদারিত্ব থাকবে, আমরা আশা করিনি। চাঁদাবাজরা এখনও নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করছে।” তিনি উল্লেখ করেন, গণঅভ্যুত্থনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছিল, যারা দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে জনগণের ওপর গুম, খুন, নির্যাতন, দুর্নীতি, লুটপাট আর ভোটাধিকার হরণের মতো অপকর্ম চালিয়েছে।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “তিন তিনবার দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সীমাহীন জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। গণঅভ্যুত্থান সেই জনগণের বিজয়ের সাক্ষী।”

একই সমাবেশে তিনি দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব ও জাতীয় নাগরিক পার্টি সবসময় রাজপথে আছে, রাজপথেই থাকবে। আমরা দেশের সংস্কার চেয়েছি, বিচার চেয়েছি। এসব জনদাবির বিরুদ্ধে আজও একটি পক্ষ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনও মাঠে রয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, অনেকে ভেবেছিল দুই থেকে তিনটি আসন কিংবা ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার লোভ দেখিয়ে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে দমিয়ে রাখবে বা কিনে নেবে। কিন্তু যারা এই আন্দোলন করেছেন, তাদের কেনার সাধ্য বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের হয়নি। তার ভাষায়, “যারা বিপ্লবের শক্তি, তারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে, তাদের কেনার সাধ্য কোনো রাজনৈতিক দলের হয়নি।”

পিরোজপুরের সকল ধর্মের মানুষের উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত দেশ গড়াই আমাদের লক্ষ্য। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ—সকলেই আমাদের এই স্বপ্নের অংশীদার।”

পথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, জেলা যুগ্ম সমন্বয়কারী নাজমুল ইসলাম সোহাগ ও মাহাবুবুল আলম নাঈমসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। পিরোজপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব মশিউর রহমান পথসভায় সভাপতিত্ব করেন।

এদিন দুপুর ১২টায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা পিরোজপুর সার্কিট হাউস থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রাটি পিরোজপুর শহরের সিও অফিস, সদর হাসপাতাল গেট, মহিলা কলেজ, সাধনা ব্রিজ ও শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। প্রবল ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

এর আগে শনিবার রাত ১০টার দিকে এনসিপি নেতারা শহরের সাঈদী ফাউন্ডেশনে চিরনিদ্রায় শায়িত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কবর জিয়ারত ও দোয়া-মোনাজাত করেন।