অভয়নগরে টানা বৃষ্টির পানিতে ভবদহে ফের জলাবদ্ধতা!

এফএনএস (মল্লিক খলিলুর রহমান; অভয়নগর, যশোর) : | প্রকাশ: ১৪ জুলাই, ২০২৫, ০৬:২০ পিএম
অভয়নগরে টানা বৃষ্টির পানিতে ভবদহে ফের জলাবদ্ধতা!

টানা বৃষ্টিতে যশোরের অভয়নগর উপজেলার দুঃখ্যাত ভবদহ এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ফের জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। তলিয়ে গেছে সবজি ও ধানক্ষেত। ভেসে গেছে মাছের ঘের। এতে কৃষক ও মৎস্য চাষিরা হচ্ছেন ক্ষতির সম্মুখীন। 

জানা গেছে, টেকা নদীসহ কয়েকটি খাল ও বিলে অবৈধ নেটা-পাটা ও চায়না জাল বসিয়ে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। যে কারণে এবার বর্ষ মৌসুমের শুরুতেই উপজেলার প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নসহ নওয়াপাড়া পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। 

রোববার (১৩ জুলাই) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবদহ অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত অভয়নগরের পায়রা, চলিশিয়া, সুন্দলী ও প্রেমমবাগ ইউনিয়নের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। এছাড়া নওয়াপাড়া পৌরসভার ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বেশ কিছু পরিবার। পানি নিষ্কাশনের খাল ও নদীতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধ নেট-পাটা ও কারেন্ট জাল বসিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করেছে।  রয়েছে প্রচুর পরিমানে কচুরিপানা। মৎস্যঘের মালিকরা বালুর বস্তা ফেলে মাছ আটকে রাখার চেষ্টা করছেন।  

উপজেলার সরখোলা গ্রামের তাছলিমা বেগম বলেন, রাস্তা থেকে বাড়ি পর্যন্ত যেতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি হয়েও সরকারি কোনো সহযোগিতা মেলেনি। 

ডুমুরতলা গ্রামের নবনিতা রাণী বিশ্বাস বলেন, আমাদের এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধন হবে কি ? জন্মের পর থেকে ভবদহের একই চিত্র দেখে আসছি। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয় না। কোটা গ্রামের মৎস্যঘের মালিক কামরুজ্জামান তরফদার বলেন, ৩০০ বিঘা জমিতে পাশাপাশি দুটি মাছেরঘের ভেসে গেছে। ঘেরে অর্ধকোটি টাকার মাছ ছিল। ক্ষতি পরিমান পরে বলা সম্ভব হবে।       

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার ১২৯ হেক্টর আবাদি জমি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ২৫ হেক্টর আউশ ও ৪৫ হেক্টর আমন ধান, ৫৮ হেক্টর সবজি ও ১ হেক্টর জমির মরিচ রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না হলে উপজেলাব্যাপী ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় কৃষি ও কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির ফলে উপজেলার পায়রা, চলিশিয়া, শ্রীধরপুর, সিদ্ধিপাশা ও প্রেমবাগ ইউনিয়নে ২৮৪টি মাছের ঘের (২২৫ হেক্টর) ভেসে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারন করার জন্য কাজ চলছে। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুশফিকুর রহমান জানান, সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জলাবদ্ধতার বিষয় জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। 

এ ব্যাপারে রোববার (১৩ জুলাই) বিকালে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম শীল বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকায় পানিবন্দি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। যেসব নদী, খাল ও বিলে অবৈধভাবে নেট-পাটা ও জাল ফেলে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করেছে। জলাবদ্ধ এলাকায় কচুরিপানা পরিস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে