সরাইলে হাইওয়ে থানার ওসি এএসআই সহ ৬ পুলিশ ক্লোজড্

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : | প্রকাশ: ১৫ জুলাই, ২০২৫, ০৩:২৯ পিএম
সরাইলে হাইওয়ে থানার ওসি এএসআই সহ ৬ পুলিশ ক্লোজড্

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে এস.এ পরিবহনের কাভার্ড ভ্যান আটকিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গ্রাহকের পার্শ্বলে লুট ও ঘুষের ৯০ হাজার টাকা ফেরৎ দেয়ার সংবাদ প্রচারের পর খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন রহমান এএসআই বিপলু বড়ৃয়া ৪ কন্সটেবলসহ ৬ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড্ করেছেন হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। গত ১৪ জুলাই সোমবার সকালে তাদের বিরূদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চল। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ। এদিকে বিষয়টি সরজমিনে খতিয়ে দেখতে গত সোমবার কুমিল্লা সদর দপ্তরের ডিআইজি মো. মোদাচ্ছের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

অনুসন্ধান ও ভুক্তভোগি সূত্র জানায়, জরূরী ডকুমেন্ট ও পার্শ্বেল বোঝাই এস.এ পরিবহনের একটি কাভার্ড ভ্যান গত ২ জুলাই রাত ১০টার দিকে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্যেশ্যে ছেড়ে আসে। ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে মহাসড়কের খাঁটিহাতা থানার সামনে ওই ভ্যানটিকে আটক করেন এএসআই টিপলু বড়ুয়ার নেতৃত্বে অতি উৎসাহী একদল পুলিশ। তারা অস্ত্রের মুখে চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে তল্লাশির নামে তান্ডব চালায়। এ সময় গ্রাহকের বুকিং করা জিরা ও ফুসকায় ব্যবহারের মসলা জাতীয় পণ্যকে অবৈধ উল্লেখ করে জব্দ করার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে মেমো থেকে গ্রাহকের নম্বর সংগ্রহ করে ফোনে ডেকে ঘটনাস্থলে আনেন। হুমকি ধমকি দিয়ে গ্রাহকের কাছে ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করেন কথিত অভিযানের নেতৃত্বে থাকা এএসআই টিপলু বড়ুয়া। পরে গ্রাহকের সাথে ৯০ হাজার টাকায় রফাদফা করেন। ঘটনাস্থলের পাশেই একটি এটিএম বুথ থেকে ২টি কার্ড ব্যবহার করে ৮০ টাকা উত্তোলন করে টিপলু বড়ুয়াকে দেন গ্রাহক উকিল আহমেদ। মন ভরেনি টিপলুর। আরো ১০ হাজার টাকার জন্য গাড়ি ছাড়েননি। পরে টিপলুর দেয়া একটি বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন গ্রাহক। পুলিশের দেয়া ওই বিকাশ নম্বরটি (০১৭২১-৭৮৩২৩৮) শাহেদ নামের এক সিএনজি চালকের। শাহেদ কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ গ্রামের বসিন্দা। সে দীর্ঘদিন ধরে হাইওয়ে পুলিশের হয়ে সিএনজি আটক ছাড়ের দালালি করছে। গ্রাহক উকিল আহমেদ বলেন, ভ্যান আটকিয়ে তারা নানা ধরণের ভয় দেখিয়েছেন। হুমকি দিয়েছেন। গাড়িতে ৩-৪ লাখ টাকার মাল রয়েছে। তাদের থানায় বাংলাদেশ ট্রন্সপোর্টের একটি গাড়ি এক মাস ধরে আটক আছে। সেটি দেখিয়ে বলছেন মামলা করবেন। বাধ্য হয়ে তাদেরকে ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারপরও ছাড়ে না। দাবী আরো ১০ হাজার। পরে আমার পার্টনারের মাধ্যমে তাদের দেয়া বিকাশ নম্বরে আরো ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর গাড়ি ছেড়েছেন। বিষয়টি জেনে যায় গণমাধ্যম কর্মীরা। ইলেকট্রিক মিডিয়ার একটি টিম এ বিষয়ে বিপলু বড়ুয়ার কাছে জানতে গেলে গাড়ি আটকের কথা শিকার করলেও ৯০ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে মিডিয়া কর্মীরা টাকা নেয়ার পক্ষে কয়েকটি প্রমাণ দিলে পুরো ঘটনাসহ ঘুষ গ্রহণের কথা স্বীকার করে গ্রাহককে ৯০ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়েছেন এএসআই বিপলু বড়ুয়া। সেই সাথে ঘটনা ধামাচাপা দিতে এ বিষয়ে সংবাদ না করতে গণমাধ্যম কর্মীদের ১০ হাজার টাকা দেয়ার অপচেষ্টাও চেষ্টা করেন বিপলু। সম্প্রতি বিষয়টি প্রচার হয়ে গেলে নড়েচড়ে বসেন হাইওয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা খাঁটিহাতা থানার ওসি মামুন রহমান, এএসআই বিপলু বড়ুয়া, কন্সটেবল মো. মাস্তুত মিয়া, মো. সাকিবুল, সাহাব উদ্দিন ও মো. জহিরূল ইসলামকে ক্লোজড্ করে কুমিল্লা অঞ্চলের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করেছেন। হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসিসহ ৬ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড্ করার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে