সভায় সমাবেশে সেমিনারে, দেয়ালে দেয়ালে গণঅভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আবু সাঈদের নাম আজ সবার মুখে মুখে। তিনি দিয়েছেন নতুন দেশের দিশা। বাড়িতে নুতন ঘর উঠেছে,কাদা মাটির রাস্তা পাকা হয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে কেউ না কেউ যাচ্ছেন। তাঁর কবর জেয়ারত করে সান্তনা দিচ্ছেন। অনেকেই অর্থ সহায়তাও দিয়েছেন। পরিবারের অভাব দুর হয়েছে। কিন্তু মা মনোয়ারা বেগমের বুক শুন্য, সেখানে কেবলই হাহাকার। গত বছর সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশজুড়ে যখন ছাত্র আন্দোলন তুঙ্গে, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আবু সাঈদ।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ তিনি। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়,আন্দোলন চলাকালে পুলিশ তাকে লক্ষ করে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আবু সাঈদ তখন এক হাতে লাঠি ধরে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই বুকে গুলি লাগার পরক্ষণেই তিনি লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দাঁড়ানো আবু সাঈদের সেই আইকনিক ছবিটিই নাড়িয়ে দেয় গোটা জাতীর বিবেককে। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন এক দফার হয়ে ওঠে। আজ সেই ঘটনার বছর ঘুরে এসেছে। কথা হলে আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন,বাড়ীত নয়া ঘর হছি, ট্যাকাও আইসে। মোর বাবা (আবু সাঈদ) তো নাই,বুকটা খালি করি গেছি। মোর খালি বুকটা কি কেউ পুরণ করি দিব্যার পারবি ? এসময় হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি। এরপর তিনি আরো জানান,সংসারে অভাব থাকলেও ভালোবাসার কমতি ছিল না। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি ঝোঁক ছিল আবু সাঈদের। মুখ ফুটে কোনোদিন এক টাকাও চাইতো না। যতটুকু পেরেছি, দিয়েছি। তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতো, নিজের খরচ নিজেই চালাতো। এরপর আবারো কাঁদতে শুরু করেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে মনোয়ারা বেগম বলেন, “মুই যদি কোনভাবেই আন্দোলনের কথা জাননু হয়, তাহলে যেভাবেই হোক আবু সাঈদক মোবাইল করি বাড়িত ডাকি নিয়া আননু হয়। তাহলে মোর বাবা আজও বাঁচি থাকলি হয়”। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদের বৃদ্ধ বাবা মকবুল হোসেন স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে যান। পরে তিনি বলেন,অন্য অনেক জায়গা থেকে আর্থিক সহায়তা পেলেও সরকার ঘোষিত জুলাই শহীদদের পরিবারকে যে টাকা দেওয়ার কথা, সেটি এখনো পাওয়া যায়নি।