দাবি আদায়ের জন্য অথবা প্রতিবাদ হিসেবে এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া উচিত নয়, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও গোষ্ঠীকে তাদের নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। সেসব ক্ষেত্রেও যানজট সৃষ্টি হয়ে তা জনদুর্ভোগের কারণ হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় যে প্রবণতা ক্রমাগত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তা হলো দাবি আদায়ের নামে জনজীবনকে অবরুদ্ধ করে ফেলা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে একের পর এক সহিংস ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি করতে দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চলছে অবরোধ-আন্দোলন। বিশেষ করে শাহবাগ ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা, সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘিরে প্রায় প্রতিদিনই দিনের কোনো না কোন সময় অবরোধ-বিক্ষোভ বা মানববন্ধন করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের অধিকার প্রতিনিয়ত ক্ষুণ্ন করেই দাবি আদায়ে মাঠে নামছে বিভিন্ন পক্ষ। জনদুর্ভোগ সৃষ্টির এ অপসংস্কৃতিতে একদিকে যেমন মানবিকতা, সহমর্মিতা ও দায়িত্বশীলতার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে তেমনি আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং নানা ইস্যুতে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের নীতিনির্ধারকদের ধীর প্রতিক্রিয়া এ সংকটকে দীর্ঘস্থায়ী করছে। তাই এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শুধু নৈতিক আহ্বান নয়, বরং আইনের কঠোর প্রয়োগ ও ন্যায়বিচারের সুস্পষ্ট প্রতিফলন প্রয়োজন। জনগণের ন্যায্য দাবিকে সম্মান জানিয়ে, নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা অধিকারকে নিশ্চিত করতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী অপসংস্কৃতিকে নিরুৎসাহিত করে নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। সব পেশাজীবী ও গোষ্ঠীরই উচিত জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যে কোনো কর্মসূচি পরিহার করা। বস্তুত কথায় কথায় সড়ক অবরোধের প্রবণতা থেকে সবারই সরে আসা উচিত। প্রত্যেকেরই বোঝা উচিত, এ প্রবণতা চলতে থাকলে আজ যারা অবরোধ করছেন, তারাও অথবা তাদের অসুস্থ বা বৃদ্ধ স্বজনরাও কখনো এমন দুর্ভোগের শিকার হতে পারেন। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরকারের উচিত এখন একটি দৃঢ় জাতীয় সিদ্ধান্ত নেয়া যেখানে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে দাবি আদায়ের পথকে আইনিভাবে নিষিদ্ধ করা। দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীদের আলোচনার টেবিলে বসে যুক্তিনির্ভর, মানবিক ও অংশগ্রহণমূলক সমাধান খোঁজার রীতি মেনে চলতে বাধ্য করা যাতে সেটা ভবিষ্যতে আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।