দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এর বড় প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলায়। ছিনতাই, খুন, চুরি, ডাকাতির ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। এতে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। নগরবাসী এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করছে। ছিনতাইকারী-ডাকাত চক্র তাদের অনুকূল পরিবেশ পেলেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। প্রকাশ্যে দিনে-রাতে দুর্র্ধষ ছিনতাই-ডাকাতিসহ খুন-জখম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সন্ধ্যা নামলেই রাজধানীজুড়ে নেমে আসছে এক ধরনের আতঙ্ক। সম্প্রতি, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে এলাকাবাসী আতঙ্কে মসজিদের মাইকে সতর্ক বার্তা প্রচার করছেন। বিশেষ করে রাতের বেলায় দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর। অস্ত্রধারীদের আক্রমণে মারাত্মক আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। অনেক অপরাধী কারাগার থেকে জামিনে বেড়িয়ে নানা অপকর্ম চালাচ্ছে। কারাগারে অপরাধীদের শাস্তির পাশাপাশি চারিত্রিক সংশোধনের জন্য কাউন্সেলিং করা হয়। আমাদের দেশের কারাগারে এসব ব্যবস্থা অপ্রতুল, আবার যা আছে তাও তেমন কার্যকর নয়। খাতা-কলমে থাকলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের সংশোধনে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দুটো উপায় এক. অপরাধীর বিচার করা, দুই. অপরাধ করতে চাওয়া অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা। প্রথমটা অপরাধ সংঘটন-পরবর্তী ব্যবস্থা, দ্বিতীয়টা অপরাধ সংঘটনের আগেই নেওয়া ব্যবস্থা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম ব্যবস্থাটা নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয়। এর পেছনে অনেক কারণ দৃশ্যমান। অপরাধীর বিচার করতে গেলে সবার আগে অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে, তদন্ত করতে হবে ও অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করতে হবে, যাতে আদালত বিচার করতে পারেন। বাস্তবতা হলো, বিগত সরকারের পনেরো বছর ধরে দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে গড়ে তোলা পুলিশ প্রশাসন বর্তমান সরকারের প্রতি একশভাগ অনুগত ও সহযোগিতামূলক নয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য এখনো বাহিনী থেকে অনুপস্থিত বা পলাতক রয়েছেন। যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের মধ্যেও দায়িত্বপরায়ণতা ও দায়বদ্ধতা সেভাবে দৃশ্যমান নয়, কেবলই দায়ে পড়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশ। শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা এবং আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানো। গত কয়েক দিনে রাজনৈতিক উত্তাপ-উত্তেজনার সুযোগে রাজধানী ঢাকায় যেভাবে অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক। সমাজের আইনশৃঙ্খলার হাল যদি এভাবে নড়বড়ে হয়ে পড়ে, তবে শুধু রাজধানী নয়; সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থাই ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। তাই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও আন্তরিক ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে জনগণ এখনই কার্যকর পদক্ষেপ আশা করে।