চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আগ্রাসী গাছ নিধন ও গাছের চারা উৎপাদন বন্ধ করা এখন সময়ের দাবীতে পরিনত হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মানুষসহ প্রানীকুলের সুরক্ষায় এই জনগুরুত্বপূর্ণ দাবি জোরদার হচ্ছে।
জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দুইটি ওয়ার্ড ও উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) কার্যালয়ের আওতাধীন। উপজেলার পশ্চিমের পাহাড়ি অঞ্চল চট্টগ্রাম সেনা নিবাস থেকে উত্তরে ফটিকছড়ি উপজেলার সীমানা পর্যন্ত রয়েছে বিস্তীর্ন টিলা ও পাহাড়ি এলাকা। এইসব টিলা, পাহাড়ি এলাকা ও উপজেলার বিভিন্ন অংশে এক সময় মানুষ সচেতনতার অভাব কিংবা পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয় না বুঝে দ্রুত বর্ধনশীল আগ্রাসী প্রজাতির ইউক্যালিপটাস এবং আকাশ মনি গাছের চারা রোপন করেন। কারন এই গাছ গুলো দ্রুত বর্ধনশীল। ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। ঘরের আসবাব পত্র তৈরির কাজে ব্যবহারের জন্য কম সময়ে বড় হয় বিধায় চড়া মূল্যে এই গাছ বিক্রি করা যায়। তাই পরিবেশের ক্ষতির বিষয় বিবেচনায় না এনে ব্যাপক হারে এই গাছ রোপণে লোকজন বেশী আগ্রহী হয়ে উঠে। সম্প্রতি পরিবেশ বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এই আগ্রাসী গাছের ক্ষতিকর বিষয় গুলো উঠে আসে। তাই জনস্বার্থে সরকার পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখা থেকে গত ১৫ মে আগ্রাসী ইউক্যালিপটাস ও আকাশ মনি গাছের চারা রোপন, উত্তোলন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই উপজেলার আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার লোকজন বিষয়টির প্রতি কোন ধারনা না থাকায় কিংবা না জানার কারনে এখনো বিভিন্ন নার্সারি, চারা বিক্রয় কেন্দ্র, কিংবা পশ্চিমের পাহাড়ী এলাকায় ব্যাপক ভাবে এই আগ্রাসী গাছের চারার বীজ তলা করেছে। নিজেদের জায়গায় রোপণের জন্য। এব্যাপারে লোকজনকে এখন থেকে যদি সচেতন করা না যায় তাহলে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পরবে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।
সম্প্রতি হাটহাজারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, কৃষি অফিস মিলনায়তনে আয়োজিত ফল মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন সিকদার তাঁর বক্তব্যে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করে বলেন এই দুই প্রজাতির আগ্রাসী গাছ দৈনিক ৯০ লিটার ়ভূগর্ভস্থ পানি শোষণ করে, যেখানে এই গাছ থাকবে, সেখানে আর কোন গাছ জন্মাবেনা, এই গাছের উপর দিয়ে কোন পাখি উড়ে যাবে না, কিংবা বাসা তৈরি করবে না, গাছের পাতা যেখানে পড়বে সেখানকার মাটিতে অন্য গাছ অথবা শাক সবজি উৎপাদন হবে না। গাছের পাতার ছাই পড়লে ও মাটির উৎপাদন ক্ষমতা নস্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া এই গাছের ফুলের বাতাস কোন মানুষ নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলে সেই মানুষ মরন ব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে। তাই তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ক্ষতিকর এই আগ্রাসী গাছ রোপণ ও উৎপাদন থেকে বিরত থাকতে উপস্থিত লোকজন ও তাদের মাধ্যমে বিষয়টি প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম মশিউজ্জামান, উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা প্রশসানের কর্মকর্তা, গণমাধ্যম কর্মী, কৃষি উদ্যোক্তাগন ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। তাই পরিবেশের ভারসাম্য ও প্রানীকুলের সুরক্ষার জন্য এইসব আগ্রাসী গাছ অভিলম্ভে নিধন, গাছের চারা রোপন ও উৎপাদন বন্ধ এখন সময়ের দাবী পরিনত হয়েছে।