দিঘলিয়ার পল্টি খামার করে সফল উদ্যোক্তা

এফএনএস (সৈয়দ জাহিদুজ্জামান; দিঘলিয়া, খুলনা) :
| আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম | প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০১:৪৭ এএম
দিঘলিয়ার পল্টি খামার করে সফল উদ্যোক্তা

গত দুই বছর (২০২২ সালের আগে) ঘের করে নানা সামাজিক সমস্যা ও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে লোকসান গুনে দিশেহারা হয়ে হঠাৎ ব্যবসা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন বারাকপুর গ্রামের ছলেমান মোড়লের পুত্র রিয়াদ মোড়ল। তিনি বাড়ির পিছনে নিজস্ব জমির উপর গড়ে তোলেন বিশাল খামার ঘর। নিচতলা ও দোতলা মিলে বিশাল মুরগির শেড। কিন্তু সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা না থাকায় এবং ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে লোন না পাওয়ায় সবগুলো শেডে মুরগির চাষ করা সম্বব হচ্ছেনা। বিগত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নিচের শেড গুলোতে পানি জমে যায়। শেড ভরা মুরগি। সরানোর কোনো জায়গা ছিল না। স্বল্প মূল্যে মুরগী বিক্রি করে দেওয়া হয় পুঁজি উদ্ধারের মানসে। তবুও পুঁজি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সর্বনাশা বর্ষার জলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন এ উদ্যোক্তা। তবুও হাল ছাড়েনি রিয়াদ। মাত্র ৫০০ ব্রয়লার মুরগীর বাচ্চা তুলে শুরু করেছেন ব্যবসা।  এক আত্মীয়ের পরামর্শে ২০২২ সালে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য মাছ, মুরগি ও গাভি পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে ঘের ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় পুঁজি হারিয়ে মাত্র ২ লাখ টাকা দিয়ে ৫০০ ব্রয়লার মুরগীর বাচ্চা নিয়ে পোল্ট্রি খামার শুরু করেন। শত বাঁধা আর প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি দমে যাননি, নিরাশ হননি। যেখানে তিনি মাছ চাষে লোকসান নিয়ে দিশেহারা ছিলেন, সেখানে তাঁর এখন প্রতিমাসে আয় ২ লাখ টাকা। এভাবেই এ প্রতিবেদকের কাছে নিজের সফলতার গল্প তুলে ধরেন উদ্যোক্তা রিয়াদ মোড়ল। তিনি খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের পূর্ব বারাকপুর এলাকার ছলেমান মোড়লের ছেলে। উদ্যোক্তা মোঃ রিয়াদ মোড়ল বলেন, প্রথমে তার নিজ বাড়িতে একটি মুরগির শেড তৈরি করে এক হাজার লেয়ার মুরগি পালন শুরু করেন। এরপর তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে নিজ বাড়ির পিছনের নিজেস্ব জায়গার ওপর তার ৩টি ভালো মানের মুরগির শেড এবং তাতে প্রায় ২ হাজার মুরগির চাষ করা সম্ভব। কিন্তু পুঁজি সংকটে বড় সংখ্যায় মুরগীর বাচ্চার লোড কিছুতেই সম্ভব হয়ে উঠছেনা। মূল উদ্যোক্তা রিয়াদ মোড়লের পিতা ছলেমান মোড়ল এ প্রতিবেদককে জানান, পল্টি শিল্পের স্বর খায় মধ্যভোগী সেন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। মুরগীর বাচ্চা সরবরাহে প্রতি বাচ্চায় ১০/১৫ টাকা বেশী। খাদ্যে বস্তা প্রতি ৩০০ টাকা বেশী। মুরগী বিক্রির সময় মুরগির দাম কম। খামারীরা সরাসরি বিক্রি করতে গেলে বাজার ব্যবসায়ীরা কিনবেনা। ফলে সিন্ডিকেটের বাইরে পল্টি ব্যবসা সম্ভবই নয়। আবার সেন্ডিকেটের কথা সহসা কেউ স্বীকারও করবেনা। তবে তিনি পল্টি খামারীদের এ জটিল ও কঠিন সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে না পারলে অচিরেই দিঘলিয়া পল্টিবিহীন দিঘলিয়া হয়ে পড়বে। দিঘলিয়ায় নতুন করে কোনো যুবক আর পল্টি শিল্পে ঝুঁকবে না। তিনি আরও বলেন, এ সকল এজেন্টদের কাছ থেকে মুরগির বাচ্চা কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকা দিয়ে। অপর দিকে একটা মুরগির এক মাসে খাবার খরচ পড়ছে ৩০০ টাকা। কিন্তু সিন্ডকেটের মাধ্যমে খুচরা মুরগী ব্যবসায়ীর কাছে মুরগি বিক্রি হয় ১৩০/১৩৫ টাকা কেজি। কিন্তু বাজারে মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৭০/১৮০ টাকা। তিনি আরও বলেন, মুরগি পালনে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। বর্তমানে আরও দুইটি মুরগির শেড তৈরি করা হচ্ছে। তবে এ শেডে মুরগির বাচ্চা তোলার ব্যাপারে ধীরে চলা নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। তাঁর খামারে নিজেরাই কাজ করেন। বাইরের কোন কাজের লোককে খামারের ভেতরে যেতে দেওয়া হয় না।   উদ্যোক্তা মোঃ রিয়াদ মোড়ল বলেন, আমার আর্থিক অবস্থা এবং পোল্ট্রি খামার দেখে এলাকার অনেক বেকার ছেলে পোল্ট্রির খামার করে তারাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ঘুরে পোল্ট্রি খামার করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। এতে বেকারত্ব ঘুচবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। তিনি শিক্ষিত বেকার যুবকদের পোল্ট্রি খামার করার আহ্বান জানান। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাহমুদা বেগম বলেন, খামার একটি লাভজনক ব্যবসা। রিয়াদ মোড়লের মতো অনেকেই খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়। উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে উপজেলা যুব উন্নয়ন দপ্তরও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ  ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে