বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) পূর্ণাঙ্গ মিশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। তিন বছর মেয়াদি এই মিশন চালুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই ১৬টি দেশের কাতারে যুক্ত হলো, যেখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ পূর্ণাঙ্গ ম্যান্ডেট নিয়ে সরাসরি কান্ট্রি অফিস পরিচালনা করে। অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে—মেক্সিকো, কলম্বিয়া, ফিলিস্তিন, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, সিরিয়া, নাইজার ও মৌরিতানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রসমূহ।
জাতিসংঘের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংস্থাটির সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। দেশে মানবাধিকার সুরক্ষায় চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া এবং অতীতে সংঘটিত সহিংস ঘটনার তদন্তে জাতিসংঘ একটি সমন্বিত তথ্যানুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেন, “বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষার যে অঙ্গীকার রয়েছে, এই মিশনের সূচনা তারই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। এটি আমাদের কার্যালয়কে পূর্বে করা সুপারিশ বাস্তবায়নে আরও কার্যকরভাবে সহায়তা করতে পারবে। পাশাপাশি সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করবে।”
এই মিশনের অধীনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা দেবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সহায়তার পাশাপাশি সিভিল সোসাইটি ও অন্যান্য অংশীজনের সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এর আগে, ওএইচসিএইচআরের বাংলাদেশ মিশন স্থাপনের প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় একটি উপদেষ্টা পরিষদ, যার সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিবৃতি অনুযায়ী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় চূড়ান্ত সম্মতি দেওয়া হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এসব কান্ট্রি অফিস সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সরাসরি কাজ করে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে করে জাতিসংঘ সরাসরি ভুক্তভোগী, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী এবং সরকার সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানবাধিকার সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশে এই নতুন মিশনের শুরু মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষা, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এই কার্যক্রম দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।