কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র উত্তেজনা। শাহ আজিজুর রহমান হলসংলগ্ন পুকুর থেকে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। রহস্যজনক এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ, শ্রদ্ধা নিবেদন এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংলগ্ন পুকুরে ভেসে থাকতে দেখা যায় সাজিদের নিথর দেহ। সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে। প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, মরদেহের নাক-মুখে রক্ত ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল, যা প্রাথমিকভাবে এই মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না বলে সন্দেহ জাগায়।
সাজিদের বাবাসহ সহপাঠীদের দাবি, এটি নিছক পানিতে ডুবে মৃত্যু নয়। তাদের মতে, এর পেছনে থাকতে পারে অন্য কোনো রহস্যজনক ঘটনা, যা দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করা উচিত।
শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়। এসময় তারা প্রশাসন ভবনের গেট তালাবদ্ধ করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘তুমি কে, আমি কে—সাজিদ সাজিদ’, ‘ভুয়া ভুয়া প্রশাসন’, ‘বাজেট নাই বাজেট নাই, বাজেট কি তোর বাপে খায়’—এমন নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, লাশের সন্ধান পাওয়ার অনেক পরে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। এমনকি ঘটনাস্থলে চিকিৎসক বা অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায়নি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ভ্যানে করে সাজিদকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তারা বলেন, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থানা থাকার পরও পুলিশের এত বিলম্বে আসা, প্রশাসনের কোনো সিনিয়র কর্মকর্তার সময়মতো উপস্থিত না হওয়া এবং সিসিটিভি ক্যামেরার অভাব পুরো ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একাধিক দাবি তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু ও দ্রুত তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ, পুরো ক্যাম্পাসে সিসিটিভির আওতা নিশ্চিত করা, নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন, এবং ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ। তারা বলেন, প্রশাসন যদি বাজেট ঘাটতির কথা বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যায়, তাহলে ছাত্ররাই চাঁদা তুলে সিসিটিভি লাগাবে।
এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। শিক্ষক সমাজও শিক্ষার্থীদের দাবিকে ন্যায্য উল্লেখ করে দ্রুত তদন্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত তদন্ত অগ্রগতি বা ফলাফল বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভ।