রংপুর নগরের সিও বাজারে একটি এলপিজি অটো গ্যাস স্টেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এই বিস্ফোরণে ইঞ্জিনিয়ার সোহাগ নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ধসে পড়েছে আশপাশের ঘরবাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ২০টি যানবাহন।
রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের কোলঘেঁষে অবস্থিত ‘মেসার্স সিও বাজার এলপিজি অটো গ্যাস অ্যান্ড কনভারশন সেন্টার’টি সাত দিন ধরে গ্যাস বিক্রি বন্ধ রেখেছিল, কারণ ট্যাংকারে লিকেজ ধরা পড়েছিল। শনিবার সকালে সেই লিকেজ মেরামতের কাজ চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেরামতের সময় হঠাৎ বিকট শব্দে ট্যাংকার বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী, কেঁপে ওঠে আশপাশের এলাকা।
বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন মেরামতের কাজে নিয়োজিত অন্তত চারজনসহ আরও অনেকে। তাদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার সোহাগকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান জানান, আহতদের চিকিৎসা চলছে এবং দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের ফলে আশপাশের দোকান, বাড়িঘর ও চলন্ত যানবাহনের জানালা, দরজা, ফ্যান এবং আসবাবপত্র চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। কলাপাতা খাবার হোটেলের মালিক সোমা ইসলাম বলেন, “বিস্ফোরণের সময় আমার দোকান কেঁপে ওঠে, সিলিং ফ্যান পড়ে যায়, কাস্টমাররা দৌঁড়ে বাইরে চলে যায়।”
ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। রংপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. বাদশা মাসউদ আলম জানান, ট্যাংকারের লিকেজ মেরামতের সময় চাপ সৃষ্টির ফলে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ পরিমাণ তদন্ত শেষে জানানো হবে বলে তিনি জানান।
ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন রংপুর সেনা ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সোবাহান মোল্লা। তিনি জানান, বিস্ফোরণে আশপাশের ঘরবাড়ি ও যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাটির কারণ অনুসন্ধানে সেনাবাহিনী কাজ করছে। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি থাকলে তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রংপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান, ট্যাংকারে লিকেজ থাকায় স্টেশনটি এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ ছিল। সংস্কারের সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত করেছে এবং এলপিজি স্টেশনগুলোর নিরাপত্তা বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।