‘শিলং থেকে গডফাদার এসেছে’—সালাহউদ্দিনকে ইঙ্গিত করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৯ জুলাই, ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম
‘শিলং থেকে গডফাদার এসেছে’—সালাহউদ্দিনকে ইঙ্গিত করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর
মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

কক্সবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এক বক্তব্য। তিনি কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ইঙ্গিত করে ‘নব্য গডফাদার’ বলে আখ্যা দেন। এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে জেলা জুড়ে বিক্ষোভ, মঞ্চ ভাঙচুর ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো রাজনীতি।

শনিবার (১৩ জুলাই) কক্সবাজার শহরের পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির পথসভায় নাসীরুদ্দীন বলেন, “আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জে বিখ্যাত গডফাদার ছিল শামীম ওসমান। এখন শুনছি কক্সবাজারে শিলং থেকে নব্য গডফাদার এসেছে। সে ঘের দখল করছে, জায়গাজমি দখল করছে, চাঁদাবাজি করছে। আবার নাকি সে সংস্কার বোঝে না।”

যদিও তিনি সরাসরি সালাহউদ্দিনের নাম নেননি, তবে ইঙ্গিত স্পষ্ট ছিল। বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, “কক্সবাজারের জনতা এ ধরনের সংস্কারবিরোধী, যে পিআর বোঝে না, তাকে রাজপথেই ঠেকাবে ইনশাআল্লাহ।”

এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বিএনপি এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিকেলে চকরিয়া পৌর শহরের ‘জনতার শপিং সেন্টার’-এর সামনে এনসিপির সমাবেশের অস্থায়ী মঞ্চ ভাঙচুর করে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। একইভাবে ঈদগাঁও উপজেলায় এনসিপির আরেকটি মঞ্চও ভাঙচুর করা হয়। চকরিয়া, ঈদগাঁওসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়, যেখানে নাসীরুদ্দীন ও এনসিপির বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়।

ঘটনার পর এনসিপির নেতারা আর কোনো বক্তব্য না দিয়েই বান্দরবানের দিকে চলে যান বলে জানান দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সুজাউদ্দিন।

ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, “এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য। এমন মন্তব্য রাজনৈতিক সম্প্রীতি নষ্ট করবে।”

কক্সবাজার জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসূপ বদরী সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “জাতীয় নেতা সালাহউদ্দিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে পাটোয়ারীর অশালীন কটূক্তির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।” পরবর্তী পোস্টে তিনি জেলাবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।

সামাজিক মাধ্যমেও প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ লিখেছেন, “কক্সবাজার সালাহউদ্দিন আহমেদের গোপালগঞ্জ— এটা অনুধাবন করা উচিত ছিল।”

ঘটনার বিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এনসিপি নেতাদের বহনকারী গাড়ির বহর পুলিশ পাহারায় কক্সবাজার ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা জুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ তৎপর রয়েছে।

এদিকে, কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন চৌধুরী জানান, এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মাঠে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এই বক্তব্য ও এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কেবল রাজনৈতিক বিভাজনকেই সামনে আনেনি, বরং কক্সবাজারে দলীয় কোন্দল ও কর্তৃত্ব নিয়ে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে—যার প্রভাব রাজপথ ছাড়িয়ে রাজনৈতিক ভবিষ্যতের হিসাবনিকাশেও পড়তে পারে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে