জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর এক বক্তব্য ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের রাজনীতি। স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা এই বক্তব্যকে সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ‘অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর’ বলে উল্লেখ করে কঠোর প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) কক্সবাজার পাবলিক হল মাঠে এনসিপির পদযাত্রা-পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার ছিলেন শামীম ওসমান, এখন কক্সবাজারে নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছেন। তিনি ঘের, জমি ও লবণক্ষেত্র দখল করছেন, চাঁদাবাজিও করছেন।” সালাহউদ্দিন আহমেদকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “নাম বললাম না। সংস্কার বোঝেন না, পিআরও বোঝেন না। এমন ব্যক্তিকে কক্সবাজারবাসী রাজপথে ঠেকাবে ইনশাআল্লাহ।”
বক্তব্যটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সমাবেশে বক্তব্য চলাকালেই এক যুবক মঞ্চ লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারেন। এরপর ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পাবলিক হল মাঠে এনসিপির ব্যানার ও ফেস্টুন খুলে আগুন ধরিয়ে দেয়। শহরে বের হয় বিক্ষোভ মিছিল।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তারা বলেন, “সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজারের মাটি ও মানুষের প্রতীক। গুম, নির্যাতনের শিকার এই জাতীয় নেতার বিরুদ্ধে যেকোনো কুরুচিকর মন্তব্য কক্সবাজারবাসী মেনে নেবে না। ডার্বি নাসীর জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলে কক্সবাজারে এনসিপির মাটি থাকবে না।”
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সালাহউদ্দিন আহমেদের নিজ এলাকা চকরিয়া, পেকুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ হয়। চকরিয়ার হাঁসের দিঘী আর্মি ক্যাম্প এলাকায় এনসিপির গাড়িবহর নিরাপত্তা শঙ্কায় দুই ঘণ্টা আটকে থাকে। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় সেনাবাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় গাড়িবহরকে চকরিয়া পার করিয়ে দেওয়া হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, “এনসিপি নেতা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য দিয়ে কক্সবাজারের রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছেন। এমন অসংবেদনশীল বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।”
চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ এনামুল হক বলেন, “নাসীর পাটোয়ারী ও তার সঙ্গীরা আওয়ামী লীগের মতো গুম ও নির্যাতনের বৈধতা দিচ্ছেন। তারা এখন রাজনীতির নতুন চেহারা হয়ে জনগণের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হচ্ছেন।”
এদিকে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করতে ও সালাহউদ্দিন আহমেদের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়েই এমন বক্তব্য দিয়েছেন নাসীরুদ্দীন। তাদের মতে, এটি শুধুই কোনো ব্যক্তির মানহানিকর উক্তি নয়, বরং একটি জাতীয় রাজনৈতিক অপচেষ্টার অংশ।
সাবেক গুম হওয়া নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সংস্কার ও জবাবদিহিতামূলক রাজনীতির অন্যতম মুখ। এনসিপির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে এমন বক্তব্য বিএনপি ঘনিষ্ঠ মহলে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।