শেরপুরের গারো পাহাড়ে হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর খাদ্য নিশ্চিত করতে 'খাদ্য বাগান' গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে রোপণ করা হয়েছে বন্যপ্রাণীর প্রিয় খাবারের ফলদ ও বনজ গাছের চারা।
শেরপুর বন বিভাগ সূত্র বলছে, এটি বাস্তবায়ন হলে বন্যপ্রাণীদের খাদ্য ঘাটতি মেটানোসহ মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সহাবস্থান নিশ্চিত হবে। এতে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব কমে আসবে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা শেরপুর জেলার তিন উপজেলা শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী। এই তিন উপজেলার সীমান্তজুড়ে বিচরণ করে বন্যহাতি। এরমধ্যে শ্রীবরদী উপজেলার রাজার পাহাড়ে হাতির অবস্থান সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি এই পাহাড়ে শুরু হয়েছে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিচালন ব্যয় খাতের আওতায় ৪০ হেক্টর জমিতে বন বিভাগ হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর খাদ্য নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হচ্ছে 'খাদ্য বাগান'। যেখানে রোপণ করা হয়েছে ৬০ প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছের চারা। এরমধ্যে চাপালিশ, বট, পাকুড়, জলপাই, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, কাঁঠাল, বড়ই, করমচা, কলা, বেল, চালতা, আতাফল, বহেড়া, আমলকী, হরীতকী উল্লেখযোগ্য। এসব ফলদ ও বনজ গাছের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর খাদ্য নিশ্চিত করা ছাড়াও তাদের নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি হবে।
বালিজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা আলী মিয়া জানান, এই বাগানটি সঠিকভাবে হলে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়া এখানে বাস করবে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, এদের খাবারের উৎস তৈরি হবে এই বাগানটি । সে ক্ষেত্রে বণ্যপ্রাণী আর লোকালয়ে আসবে না। রাজার পাহাড়ের পাশেই আগে থেকে একটা বাগান রয়েছে। সেখানেই হাতিসহ অন্য প্রাণীরা থাকে।
মালাকোচা গ্রামের আকরাম মিয়া বলেন, নতুন বাগানে মোটামুটি সব ধরনের গাছ আছে। ফলের গাছ ছাড়াও অনেক ছায়াযুক্ত গাছ রয়েছে। যেগুলো বড় হলে ওই এলাকায় ছায়া থাকবে। আমরা পাহাড়ে যারা থাকি, বিশেষ করে রাজার পাহাড়ের আশপাশে, তারা সবাই মিলে এই বাগান পাহারা দেই। যেন কেউ গাছের ক্ষতি করতে না পারে।
বালিজুড়ি রেঞ্জের কর্ণঝোড়া বিট কর্মকর্তা রাকিব হোসেন বলেন, পাহাড়ে পাখি থেকে শুরু করে যেসব বন্যপ্রাণী আছে সেগুলোর খাদ্যের চাহিদা এই বাগান থেকে পূরণ হবে। এ ছাড়া পাহাড়ে যেসব মাইক্রো অর্গানিজম আছে, যেগুলো মাটিতে বসবাস করে, সেগুলোর জন্য ঔষধি এবং বনজ চারা লাগানো হয়েছে। এখানে একটা ইকো সিস্টেম তৈরি হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন শাইন'র নির্বাহী পরিচালক ও শেরপুর বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মুগনিউর রহমান মনি বলেন, বন্যপ্রাণীর খাদ্য ও আবাস্থল নিশ্চিতকরণের জন্য বর্তমানে বন বিভাগ রাজার পাহাড়ে বনায়নের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি প্রসংশনীয়। বনটি যদি গড়ে ওঠে তাহলে হাতিসহ অন্য পশুপাখির নিরাপদ আশ্রয় হবে। একই সঙ্গে হাতির সঙ্গে মানুষের যে যুদ্ধ সেটিও অনেকাংশে কমে আসবে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, রাজার পাহাড়ে হাতির আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে হাতিগুলো লোকালয়ে আসে। এই বাগান হলে আর এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে না। এতে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব অনেকটাই কমে আসবে।