ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ে বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষ্যে কালো ব্যাজ ধারণ ও মৌন মিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় বিএনপি সহযোগি সংগঠন। তবে এই কর্মসূচিতেও পরিস্কার বিভক্ত সরাইল বিএনপি। গত শুক্রবার বাদ আছর বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যরিস্টার রূমিন ফারহানা ও জেলা বিএনপি’র কার্যনির্বাহী সদস্য মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে দলীয় বিশাল বহর নিয়ে কর্মর্সূচি পালন করেছেন। একই দিন সকাল বেলা জেলা বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরূজ্জামান লস্কর তপুর নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ওই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দলটির তৃণমূলের নেতা কর্মীরা বিব্রত। আর সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে মুখরোচক আলোচনা। বিভক্তি নিয়ে ভিন্ন ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন তারা।
দলীয় ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সরাইল উপজেলা বিএনপি’র কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ধরেই চলছে গ্রূপিং দ্বন্ধ। উপজেলা কমিটির সাবেক সম্পাদক ১/১১ তে কারানির্যাতিত নেতা মো. আনোয়ার হোসেন মাস্টারের নেতৃত্বে একটি বলয় গড়ে ওঠে। আরেকটি বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সভাপতি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর ও সম্পাদক তপু। বর্তমান কমিটি বাতিলের দাবীতে আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে জুতা ঝাঁড়ু মিছিলসহ নানা কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সরাইল। দলটির জেলা কমিটি ঘোষণার পর থেকে সরাইলে প্রকাশ্য দ্বন্ধ সংঘাত অনেকটাই এখন শিথিল। তবে দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কর্মসূচিতে এখনো ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেন না স্থানীয় বিএনপি। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রূমিন ফারহানা, আনোয়ার হোসেন ও তপু তিনজনই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। আর এই কারণেই শুক্রবার জুলাই-আগষ্টের অভ্যুত্থানের কর্মসূচি পালন করেছেন বিভক্ত হয়ে। শুক্রবার বিকেলে রূমিন ফারহানা ও আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে সহস্রাধিক নেতা কর্মীর অংশ গ্রহণে কালো ব্যাজ ধারণ করে একটি মৌন মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায়। সেখানে ব্যারিস্টার রূমিন ফারহানা ও আনোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন-উপজেলা কৃষক দলের আহবায়ক মো. মশিউর রহমান, সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সম্পাদক আব্দুল জব্বার, বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য মো. মোশাহিদ মোল্লা, মো. শফিকুল ইসলাম সেলু, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. ইসমাঈল হোসেন উজ্জ্বল, জিয়া পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক মো. আব্বাস উদ্দিন, যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল বারিক, সদর ইউপি যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. কামাল মিয়া ও যুবদল নেতা মো. আকবর। একই দিন সকাল ১০টায় হাসপাতাল মোড় থেকে উপজেলা বিএনপি’র সম্পাদক তপুর নেতৃত্বে কালো ব্যাজ ধারণ করে আরেকটি মৌন মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে পথ সভায় মিলিত হন। সেখানে উপজেলা কমিটির সহসভাপতি মো. আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথ সভায় বক্তব্য রাখেন- উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল মাহমুদ আলী, আব্দুল হাফিজ মাখন, যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশ, দপ্তর সম্পাদক সালাহ উদ্দিন বিপ্লব ও যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক নুরূল আমিন মাস্টার। উভয় কর্মসূচিতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বর্তমান সাবেক কমিটির নেতা কর্মীরা ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, দলীয় যে কোন কর্মসূচিতে উপজেলার উভয় বলয়ের নেতৃবৃন্দ আসতে বলেন। তখন আমরা খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। কারণ এক বলয়ে গেলে অপর বলয়ের নেতারা ক্ষুদ্ধ হন। ঐক্যবদ্ধ ভাবে কর্মসূচি পালন করলে আমাদের জন্য ভালো হত। লোক সমাগমও বেশী দেখা যেত। এ বিষয়ে নূরূজ্জামান লস্কর তপু বলেন, দলের দূর্দিনে উনারা হারিয়ে গিয়েছিলেন। ৫ই আগষ্টের আগে উনারা দলীয় কোন কর্মসূচিতে আসেননি। আন্দোলন সংগ্রামে উনাদেরকে মাঠে খুঁজে পায়নি। বর্তমানেও প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে দাওয়াত করি। কিন্তু উনারা আসেন না। দল তো ত্যাগী নেতা কর্মীদেরকেই মূল্যায়ন করবে। আর এ জন্যই তো বিভক্তি। আমরাও ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাজনীতিটা করতে চাই। আনোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন, দলের দু:সময়ে ভয়ে কেউ পদত্যাগ করেছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ বহিস্কার হয়েছেন। টাকা দিয়ে পদ বাগিয়ে রাজপথের কর্মী ও কারানির্যাতিত নেতাদের পদ বঞ্চিত করেছেন। গত ৩ বছরে সরাইল সদরে একটি কর্মসূচিও পালন করতে পারেননি। উনারা এমন নেতা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি লং মার্চ করতে পারছেন না। তখন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাকে বুঝিয়ে আহবান করেছেন। লোক সমাগম ঘটিয়ে দলের সম্মান বাঁচিয়েছি। উনারা বাণিজ্য করে ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে পকেট কমিটি করেছেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনাদের মামলা বাণিজ্যের কথা কারো অজানা নেই। উনারা কত বড় নেতা এখান থেকেই বুঝে নিন।