ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা নিতে আসা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে ৯৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত রোববার (২০ জুলাই) গাজার উত্তর ও দক্ষিণে বিভিন্ন স্থানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ইসরায়েলের এধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায়। শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন খ্রিস্টান ধর্মপ্রধান পোপ লিও চতুর্দশও।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানায়, গাজার উত্তরে ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছানোর পরই গুলিতে প্রাণ হারান ৮০ জন। দক্ষিণে রাফা ও খান ইউনিসের কাছে নিহত হন আরও ১৩ জন। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ২৫টি খাদ্যবাহী ট্রাক বহরও গাজার মধ্যে ঢোকার পর গুলির মুখে পড়ে। সংস্থাটি এই সহিংসতাকে "সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য" বলে নিন্দা জানিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা জনসমাগমে "তাৎক্ষণিক হুমকি" প্রতিহত করতে সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছে। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বর্ণনা ও ভিডিও চিত্রে নিরস্ত্র, ক্ষুধার্ত মানুষদের ওপর সরাসরি গুলির দৃশ্য উঠে এসেছে। অনেককে স্নাইপারের গুলিতে মাথায় ও বুকে আঘাত পেতে দেখা গেছে।
৩৬ বছর বয়সী কাসেম আবু খাতের বলেন, “আমি শুধু একটা আটার ব্যাগ নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু চারপাশে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখলাম, যেন আমরা কোনো জঙ্গলে শিকার হওয়া পশু।”
জাতিসংঘ বলেছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন ত্রাণপ্রত্যাশী নিহত হয়েছেন। তাদের ভাষায়, “এটি এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পোপ লিও চতুর্দশ রোববার প্রার্থনার শেষে গাজায় চলমান যুদ্ধকে “বর্বরতা” হিসেবে আখ্যা দেন এবং বলেন, “গাজায় প্রার্থনাস্থল ও নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা এক ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়।”
পূর্বে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জা হলি ফ্যামিলি চার্চে আশ্রয় নেওয়া তিনজন নিহত হলে পোপ এ প্রতিক্রিয়া জানান। গির্জার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা পোপ ফ্রান্সিসও এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গাজায় চলমান সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘ ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খাদ্য, পানি, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবার চরম অভাবে বহু মানুষ মৃত্যুর মুখে। ইতোমধ্যে ৭১ শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে, আরও ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জন ক্ষুধায় মারা গেছে।
দুই মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত গাজার ৮৭.৮ শতাংশ এলাকা বর্তমানে ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণ বা স্থানচ্যুতি নির্দেশনার আওতায়। ফলে জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশকে মাত্র ১২ শতাংশ এলাকায় ঠাসাঠাসি করে বসবাস করতে হচ্ছে, যেখানে মৌলিক সেবাও ভেঙে পড়েছে।
ইসরায়েল ও হামাস বর্তমানে দোহায় পরোক্ষ আলোচনা চালাচ্ছে ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি নিয়ে। তবে সাম্প্রতিক হামলা ও ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর কারণে এই আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে।