দিনাজপুর-৪ আসনে বিএনপি শক্তিশালী, ভোট বাড়াতে মরিয়া জামায়াত

এফএনএস (মোরশেদ-উল-আলম; চিরিরবন্দর, দিনাজপুর) : | প্রকাশ: ২১ জুলাই, ২০২৫, ০৪:৪৮ পিএম
দিনাজপুর-৪ আসনে বিএনপি শক্তিশালী, ভোট বাড়াতে মরিয়া জামায়াত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সংসদীয় আসন-৯ দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) এ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের ও সাধারণ জণগনের সমর্থন পেতে মনোনয়ন প্রত্যাশিরা ইতোমধ্যে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। কেন্দ্রের সবুজ সংকেতের জন্য সিনিয়র নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় তৃণমুল নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে জনসাধারণের মাঝে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। ভোটারদের মন জয় করতে নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে দৌঁড়ঝাপও শুরু করেছেন।

দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) আসনটি বেশির ভাগ সময়ই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে আলহাজ্ব মোঃ আখতারুজ্জামান মিয়া আওয়ামীলীগের প্রার্থী হুইপ মিজানুর রহমান মানুকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিএনপির পক্ষে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে -^তন্ত্র প্রাথী হলেও দলীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গ না ছেড়ে তাকে অকুন্ঠ সমর্থন দেয়ায় দল তাকে পুনরায় ২০০৮ সালে ও ২০১৮ সালে মনোনয়ন দেয়। এ আসনে বিএনপিতে তার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। অত্র আসনে বর্তমানে রয়েছে বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান। এই শক্তিশালী অবস্থান বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আখতারুজ্জামান মিয়া কেন্দ্রীক। বর্তমানে দিনাজপুর জেলার মধ্যে এ আসনটিকে বিএনপির ভোটব্যাংক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর বিকল্প এ আসনে বিএনপির অন্য কারো ভাল অবস্থান নাই। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অ্যাডঃ আব্দুল হালিম ও অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল এখনও বিএনপির কোন পর্যায়েই সদস্য হননি। তারা মাঠে থাকলেও তাদের অবস্থান খুব নাজুক। 


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও মাঠে সরব প্রচারণায় রয়েছেন। এ আসনে জামায়াতের রংপুর অঞ্চল টিম সদস্য ও সাবেক চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আফতাবউদ্দিন মোল্লা কেন্দ্রীয় ভাবে চুড়ান্ত মনোনিত হয়ে দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে পুরোদমে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তারা ইতিমধ্যে পুলিং এজেন্ট গোপনে ঠিক করে ফেলেছেন। তিনি প্রতিদিন হিন্দু ধর্মলম্বীদের হরিবাসরে, লীলায় ও মহানাম সংকীর্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ আসনে হিন্দু ধর্মালম্বীদের নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অমুসলিম শাখা গঠন করা হয়েছে। দাওয়াতী অভিযানের মাধ্যমে প্রতিটি পাড়ার প্রতিটি বাড়িতে সদস্য ফরম দিয়ে নতুন সদস্য করে নিচ্ছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে ৫ জন করে বেতনভূক্ত মহিলা শুধুমাত্র মহিলাদেরকে জামায়াতে ভোট দেয়া ও ইসলামী আইন চালুর আশ্বাস দিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। জামায়াত ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবি সংগঠনের কমিটি করে ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। পাশাপাশি তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে সরব হয়েছেন। 

অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্য থেকে নতুন ভাবে গঠন করা এনসিপি এখনও কমিটি নির্ভর। পুরোপুরি কমিটির কার্যক্রম দৃশ্যমান নাই। দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ইমামুর রশিদ, উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারি সোহেল সাজ্জাদ বিভিন্নভাবে ছুটে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনী মাঠে তাদের তেমন কোন কার্যক্রম নাই বললেই চলে। জাতীয় পাটির অবস্থা আরো শোচনীয়। তাদের কমিটিও তেমন নাই। কোন কার্যক্রমও তাদের নাই। এছাড়াও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন নদভী গণ সংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। 

এ আসনে আওয়ামীলীগের তীব্র কোন্দল ও দ্বন্দ্ব রয়েছে। পাশাপাশি তাদের নিদ্রিষ্ট ভোটও রয়েছে। গত ১৭ বছর ফ্যাসিস আচরণসহ নানান রকম দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি বর্তমানে ত্যক্ত ও বিরক্ত। এছাড়াও গত জুলাই-আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার বিপ্লবের পরে সকল নেতারা প্রায় এলাকাছাড়া। কেউ কেউ জামায়াত বিএনপির নেতাদের ম্যানেজ করে এলাকায় থাকলেও অতি সাবধানে চলাফেরা করছেন। 

বিএনপি নেতা ও জামায়াত নেতারা জানান, তারা বিনা চ্যালেঞ্জে কাউকে ছেড়ে দিবেনা। সাধারণ মানুষ জানান, যদি বিএনপি ও জামায়াত আলাদা নির্বাচন করে সেক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও বিএনপি বিজয়ী হবে।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সাধারণ, তরুণ ও নবীন ভোটাররা জানান, যিনি দূর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও সকল ধরণের বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আগামীদিনে উন্নয়নের নেতৃত্ব দেবেন এবং এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন এমন প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে