মাইলস্টোন কলেজে বিমানবিধ্বস্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছয় দফা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২২ জুলাই, ২০২৫, ১২:১১ পিএম
মাইলস্টোন কলেজে বিমানবিধ্বস্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছয় দফা দাবি

ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত এবং আহতদের নিয়ে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৭ জন শিক্ষার্থী, আহত অবস্থায় চারটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ৭৮ জন। এই ট্র্যাজেডির প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) কলেজ ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার পরদিন সকাল ৯টা থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। তবে এর আগেই দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এলাকায় কোনো ধরনের জমায়েত, সভা বা অবস্থান কর্মসূচি নিষিদ্ধ। তবু শিক্ষার্থীরা গোলচত্বর এলাকায় জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দেয়। তারা ‘ভয় নয়, আমরা চাই ন্যায়বিচার’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা।

এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ পরিদর্শনে যান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের ঘিরে ধরেন এবং ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। পরে তাঁরা কলেজের ৫ নম্বর ভবনের নিচতলায় কনফারেন্স কক্ষে যান, যেখানে শিক্ষক এবং পাঁচ থেকে সাতজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা চলতে থাকে। এরই মধ্যে বাইরে শত শত শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নিতে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মূল ভিত্তি ছয় দফা দাবি, যা হল—

১। দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের সঠিক নাম ও পরিচয় প্রকাশ।

২। আহতদের পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ।

৩। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সেনা সদস্যদের জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা।

৪। নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ।

৫। ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক, নিরাপদ বিমান চালু।

৬। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও এলাকা মানবিক ও নিরাপদভাবে পুনর্বিন্যাস।

শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, এটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অদক্ষতার ফল। তারা বিচারহীনতা ও দমননীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

এদিকে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের খুঁজতে আসেন, কেউ কেউ তাদের সঙ্গে নিয়ে ফিরে যান। কলেজের আবাসিক হোস্টেল থেকেও শিক্ষার্থীদের চলে যেতে দেখা যায়। বিশেষ করে বিধ্বস্ত হওয়া ভবনের পেছনে অবস্থিত হায়দার আলী হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীরা সরে যান।

মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষ এক নম্বর ভবনের নিচে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করেছে। পরিচালক রাসেল তালুকদার জানান, সেখান থেকে হতাহতদের তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে এবং অভিভাবকদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান চলছে।

স্কুলের শিক্ষক আফরিন জানান, বিধ্বস্ত ভবনটি মূলত প্রাথমিক শাখার জন্য ব্যবহৃত হতো। দুর্ঘটনায় ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে ঠিক কত শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত ছিল, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে