আশঙ্কাজনক অবস্থায় বহু শিশু

উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত বেড়ে ২৭, চিকিৎসাধীন ৭৮

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২২ জুলাই, ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত বেড়ে ২৭, চিকিৎসাধীন ৭৮

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর হতাহতের সংখ্যা বাড়ছেই। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে সংঘটিত এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে, যাদের মধ্যে ২৫ জনই শিশু। আহত ৭৮ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, “আমরা খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বার্ন ইনস্টিটিউটে যারা ভর্তি আছেন, তাদের মধ্যে একাধিক শিশু আইসিইউতে এবং কয়েকজন ভেন্টিলেশনে আছেন। অনেকেই এইচডিইউতে রয়েছেন, যাদের অবস্থাও সংকটাপন্ন।”

বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানটি ছিল বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই মডেলের একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান, যা সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুলের একটি দোতলা ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনাটি ঘটে দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে। ফায়ার সার্ভিস তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ পেয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। দুর্ঘটনার সময় ভবনের ভেতরে শিশু শিক্ষার্থীরা ছিল বলে মৃত ও আহতদের অধিকাংশই শিশু।

সোমবার রাতেই বিভিন্ন হাসপাতালে আটজনের মৃত্যু হয়, যা নিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭ জনে। মৃতদের মধ্যে একজন পাইলট ও একজন শিক্ষিকা রয়েছেন। সায়েদুর রহমান জানান, স্বজনদের কাছে ইতোমধ্যে ২০ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এখনো ছয়টি মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি এবং সেগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে পাওয়া একটি দেহাবশেষ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ইউনাইটেড হাসপাতালে আরও কয়েকজনকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়েছে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ৪২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২৮ জন এবং ঢাকা মেডিকেল ও ইউনাইটেড হাসপাতালে আরও কয়েকজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাসেবায় যাতে কোনো ঘাটতি না হয়, সেজন্য সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে সমন্বয় করে সম্ভাব্য টেকনিক্যাল সহায়তা নেওয়ার জন্য আগাম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত হাই কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং রোগীদের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সেনাবাহিনী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বার্ন ইনস্টিটিউটে প্রবেশের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র ও রোগীর অবস্থার প্রমাণ ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। একইসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদেরও নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পরপরই রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দেশের বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা উত্তোলন ও প্রার্থনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিহতদের স্মরণ করা হয়। চারপাশে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। হাসপাতাল ও কলেজ প্রাঙ্গণজুড়ে স্বজনদের আহাজারি, ক্ষোভ ও প্রশ্ন এখনো অব্যাহত রয়েছে।

একজন অভিভাবক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “যখন দুপুরে খবরটি শুনি, বুক কেঁপে উঠেছিল। পরে জানতে পারি আমার ছেলে বেঁচে আছে—তবু আতঙ্ক এখনো কাটছে না।”

এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি দেশের বিমান নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও জনবহুল এলাকায় সামরিক কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে বিষয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে