ডিসি-ইউএনওর নতুন পরিচয়: আসছে জেলা-উপজেলা কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২২ জুলাই, ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম
ডিসি-ইউএনওর নতুন পরিচয়: আসছে জেলা-উপজেলা কমিশনার

জনপ্রশাসনে দীর্ঘদিনের কাঠামোগত বৈষম্য ও অসামঞ্জস্য দূর করতে সরকার ব্যাপক সংস্কারে হাত দিয়েছে। এর আওতায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) পদবির পরিবর্তনের পাশাপাশি ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’ (এসইএস) নামে একটি নতুন উচ্চমানের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসইএস গঠনের পাশাপাশি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত রোববার (২০ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলোর জন্য আলাদা একটি প্রশাসনিক কাঠামো—সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস—গঠন করা হবে। এই সার্ভিসে নিয়োগ পাবেন বিভিন্ন ক্যাডার থেকে বাছাইকৃত মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা, যাঁরা অন্তত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং সিনিয়র স্কেলে উন্নীত হয়েছেন।

এসইএসে প্রবেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে, যা প্রতিবছর তিন ধাপে (উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব) আয়োজন করবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন। কোনো কর্মকর্তা পরপর দুইবার পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে আর অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন না। উত্তীর্ণদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে মেধাক্রম অনুসারে, এবং একবার এসইএসে প্রবেশের পর কেউ তার পুরোনো ক্যাডারে ফিরতে পারবেন না।

বর্তমানে উপসচিব থেকে সচিব পর্যায়ে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই বিভাজন দীর্ঘদিন ধরেই অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। প্রশাসন ক্যাডার এই কাঠামো বজায় রাখতে চায়, অন্যদিকে অন্যান্য ক্যাডার দাবিতে উঠে এসেছে শতভাগ প্রতিযোগিতাভিত্তিক পদোন্নতির। এসইএস প্রবর্তনের মাধ্যমে এই সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেই মনে করে সংস্কার কমিশন।

প্রশাসনিক কাঠামোতে আরও একটি বড় পরিবর্তন হচ্ছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদের নাম। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ডিসির নতুন নাম হবে ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা কমিশনার’ এবং ইউএনওর নতুন নাম হবে ‘উপজেলা কমিশনার’। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব প্রস্তুত করে জাতীয় প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত বাস্তবায়ন কমিটিকে (নিকার) কার্যক্রম গ্রহণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের ১০টি প্রস্তাবের মধ্যে আরও রয়েছে:

১৫ বছর পূর্ণ হলে পেনশনসহ স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার সুযোগ।

বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস কমিশন গঠন।

ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিসকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা।

মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন।

পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিয়মিততা ও স্বচ্ছতা আনার নির্দেশনা।

এগুলোর বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিসের দায়ভার হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, “এসইএস গঠন একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপ হলেও বাস্তবায়নে অনেক অসংগতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে ক্যাডারভিত্তিক ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকলে এটি প্রশাসনে বিভাজন এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “যেসব প্রস্তাব যৌক্তিক নয়, সেগুলো সংশোধন ছাড়া বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।”

বর্তমান সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা যারা ইতোমধ্যে পদে রয়েছেন, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসইএসে অন্তর্ভুক্ত হবেন। সচিব থেকে মুখ্যসচিব পদে পদোন্নতির জন্য একটি মন্ত্রিসভা কমিটি প্রস্তাব প্রস্তুত করবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে