ভারতের রাজনীতিতে চমক তৈরি করে সোমবার (২১ জুলাই) রাতে উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন জগদীপ ধনখড়। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক এই পদে থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। একইদিন সকালে বর্ষাকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা পরিচালনা করেন তিনি; কিন্তু পরে আর অধিবেশনে ফেরেননি।
রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে ৭৪ বছর বয়সী ধনখড় জানান, ‘নিজের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলার জন্য আমি ভারতীয় সংবিধানের ৬৭ (ক) ধারা অনুযায়ী অবিলম্বে ভারতের উপররাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও সংসদ সদস্যদের আন্তরিকতা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং এই দায়িত্ব পালনের সময় অনেক কিছু শিখেছেন।
চিঠিতে ধনখড় ভারতের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতাকে ‘সৌভাগ্য ও তৃপ্তির বিষয়’ হিসেবে অভিহিত করেন।
সোমবার (২১ জুলাই) বেলা ১১টায় রাজ্যসভার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করতে এসে জগদীপ ধনখড় অধিবেশন শুরু করেন। বিরোধীরা জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগাম ঘটনায় ও ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনা দাবি করলে, তিনি কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও বিজেপি নেতা জেপি নাড্ডাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেন। দুপুর ১২টার দিকে তিনি অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন এবং এরপর আর রাজ্যসভায় ফেরেননি। রাতে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি।
ধনখড়ের পদত্যাগে উপরাষ্ট্রপতির পদটি শূন্য হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ৬৮ অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে উপরাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নতুনভাবে নির্বাচিত ব্যক্তি ৬৭ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী, দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বে থাকবেন।
উল্লেখ্য, উপরাষ্ট্রপতি ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জগদীপ ধনখড় ২০২২ সালের আগস্টে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে ৩৪৬ ভোটে পরাজিত করে তিনি এই পদে আসীন হন। এর আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন, যেখানে তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের টানাপোড়েন প্রকাশ্যেই ঘটেছে।
রাজস্থানে জন্ম নেওয়া ধনখড়ের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। জনতা দলের হয়ে লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হন তিনি এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। পরে বিজেপিতে যোগ দিয়ে রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে সক্রিয় ছিলেন।
চলতি বছর মার্চে তিনি বুকে ব্যথা নিয়ে দিল্লির একটি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্বাস্থ্যগত সংকটই তাঁর পদত্যাগের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
ধনখড়ের হঠাৎ পদত্যাগ রাজনৈতিক মহলে নতুন গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছে। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই সাংবিধানিক পদে কে বসতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে নানা মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন দ্রুতই সম্পন্ন হতে হবে। এখন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন বিশেষ তাৎপর্য বহন করবে।