রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ১০ নম্বর জার্সিতে খেলে সমর্থকদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন লুকা মদ্রিচ। ক্লাব বিশ্বকাপ শেষেই এই ক্রোয়াট কিংবদন্তি পাড়ি জমিয়েছেন ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে। তার বিদায়ে শুধু একটি যুগের অবসান হয়নি, শূন্য হয়ে গেছে সেই গর্বিত ১০ নম্বর জার্সিটিও, যা রিয়ালের ইতিহাসে এক অনন্য মর্যাদা বহন করে। এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই ঐতিহাসিক নম্বরটি এবার কার গায়ে উঠবে?
রিয়ালের ১০ নম্বর জার্সিটি অতীতে ধারণ করেছেন মদ্রিচের আগেও অনেক কিংবদন্তি ফুটবলার। এই তালিকায় আছেন ওজিল, স্নেইডার, সিডর্ফ, লুইস ফিগো ও পুসকাসের মতো নাম। ফুটবলের ইতিহাসে ১০ নম্বর জার্সিকে সব সময়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়, কারণ সাধারণত দলের সবচেয়ে সৃজনশীল ও প্রভাবশালী খেলোয়াড়ই এই নম্বর পান। বার্সেলোনার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব তাদের ভবিষ্যৎ তারকা লামিনে ইয়ামালের হাতে তুলে দিয়েছে ১০ নম্বর। তাই রিয়ালের ক্ষেত্রেও এই উত্তরাধিকার কার হাতে যাবে—তা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই।
২০১৭-১৮ মৌসুমে হামেস রদ্রিগেজের কাছ থেকে ১০ নম্বর জার্সি পান মদ্রিচ। তার হাতে পড়ে এই জার্সি নতুন অর্থ ও উচ্চতা পেয়েছে। আট মৌসুম ধরে অসাধারণ ফুটবল দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে এনে দিয়েছেন অসংখ্য জয় ও ট্রফি। এই প্রেক্ষাপটে ১০ নম্বর জার্সির উত্তরসূরি নির্বাচন শুধুই কৌশলগত বা বাণিজ্যিক নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তও বটে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা জানিয়েছে, ১০ নম্বর জার্সির দাবিদার হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্দা গুলের। দুজনেই তরুণ, প্রতিভাবান এবং বিশ্বমঞ্চে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছেন।
এমবাপ্পে ফ্রান্স জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত ১০ নম্বর জার্সি পরেন এবং বর্তমানে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন। তবে রিয়ালে যোগ দিয়ে তিনি গায়ে চাপিয়েছেন ৯ নম্বর জার্সি, ক্লাবের ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১০ নম্বর দাবি করেননি। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি ক্লাবের ভক্তদের মন জয় করেছে।
অন্যদিকে, আর্দা গুলেরের ব্যাপারে বিষয়টি আরও প্রতীকী। তুরস্কের এই তরুণ মিডফিল্ডার রিয়ালে যোগ দেয়ার পর থেকেই নজর কেড়েছেন। কোচ শাবি আলনসোর অধীনে তার পারফরম্যান্স ও উন্নতি চোখে পড়ার মতো। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে, লুকা মদ্রিচ নিজ হাতে তাকে তার ১০ নম্বর জার্সি উপহার দিয়েছেন, যা অনেকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের ইঙ্গিত বলেই বিবেচিত হয়েছে।
যদিও গুলের এখনো এমবাপ্পের মতো বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেননি, কিন্তু তার সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণ তাকে রিয়ালের ভবিষ্যৎ মিডফিল্ড জেনারেশনের মূল স্তম্ভ করে তুলতে পারে।
রিয়াল মাদ্রিদ জানে, ১০ নম্বর জার্সির শুধু ঐতিহাসিক মর্যাদাই নয়, এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক দিকও আছে। এই নম্বরের জার্সি বিশ্বজুড়ে বিপুল চাহিদাসম্পন্ন, যা খেলোয়াড়ের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ায় এবং ক্লাবের বাজারেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তবে ক্লাবটি এটাও জানে যে, শুধুমাত্র মার্কেটিং বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিত।
কারণ, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ইতিহাসে এই জার্সি মানে সৃজনশীলতা, সৌন্দর্য ও নেতৃত্বের প্রতীক। এই জার্সি একসময় যারা গায়ে চাপিয়েছেন, তারা সবাই নিজেদের শৈল্পিকতা দিয়ে ফুটবলকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাই নতুন কাউকে এই দায়িত্ব দিতে হলে শুধু প্রতিভা নয়, তার মধ্যে থাকা চাই দায়িত্বশীলতা ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা।
এই মুহূর্তে রিয়াল নতুন এক স্বর্ণযুগে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সময়ে ১০ নম্বর জার্সি কার হাতে তুলে দেওয়া হবে, সেটিই হয়তো ঠিক করে দেবে পরবর্তী যুগের রিয়াল নেতৃত্বের প্রতীক কে হবেন।