হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

অবৈধভাবে শত শত মুসলমানকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করছে ভারত

এফএনএস অনলাইন: | প্রকাশ: ২৪ জুলাই, ২০২৫, ০১:১২ পিএম
অবৈধভাবে শত শত মুসলমানকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করছে ভারত

ভারত সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বেআইনিভাবে শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলিমকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলোর নাগরিক, যারা অন্য রাজ্যে গিয়ে কাজ করেন। আটক হওয়া এসব নাগরিক নিজেদের ভারতীয় দাবি করলেও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন ও হুমকির মুখে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে বাধ্য হয়েছেন।

বুধবার নিউইয়র্কভিত্তিক এই সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এতে বলা হয়, চলতি বছরের মে মাস থেকে ভারতের হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার জাতিগত বাঙালি মুসলমানদের বাংলাদেশে পাঠাতে অভিযান জোরদার করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলমানকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, জোরপূর্বক ঠেলে দেওয়া এসব নাগরিকের বেশিরভাগই আসাম, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের দরিদ্র শ্রমিক- যারা নিজেদের ভারতীয় নাগরিক দাবি করলেও বাধ্য হয়েছেন বাংলাদেশে ফিরে ঢ়ুকতে।

ঠেলে দেওয়া এসব নাগরিকের মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের বন্দুকের মুখে হুমকি-মারধর এবং কাগজপত্র ছাড়াই ঠেলে দিয়েছে- এমন অনেক অভিযোগও উঠেছে।

যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া অবৈধভাবে লোকজনকে বিতাড়ন বন্ধ ও নাগরিকদের যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করা ভারত সরকারের উচিত বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, গত জুন মাসে তারা ৯টি ঘটনার ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিকরাও রয়েছেন, যাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং পরে আবার ভারতে ফিরে আসেন।

মানবাধিকার সংস্থাটি গত ৮ জুলাই এই বিষয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেও কোনো সাড়া দেয়নি।

ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সরকারি তথ্য না দিলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, গত ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে অন্তত ১৫০০ মুসলিম পুরুষ, নারী ও শিশুকে ভারত বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত মে মাসের শুরুতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ঠেকাতে অস্বীকৃতি জানায়। আদালতের বক্তব্য ছিল, যদি তারা ভারতের নাগরিক না হন, তবে তাদের ফেরত পাঠানো যাবে। এরপর ১৬ মে আদালত রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ঠেলে দেওয়ার বিষয়টি ‘সুন্দরভাবে সাজানো গল্প’ বলে উড়িয়ে দেয়, যদিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনাটি অস্বীকার করেনি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ভারতের এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, জাতিগত বৈষম্য বিলোপ কনভেনশন ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষাকারী চুক্তির পরিপন্থি। যে কাউকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার আগে তাকে কারণ জানানোর অধিকার, আইনজীবীর সহায়তা ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়াও যারা আটক আছে, তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয় এবং নারীদের, শিশুদের, প্রবীণদের ও প্রতিবন্ধীদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত।

বিষয়টি নিয়ে সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেন, “ভারতীয় সরকার হাজার হাজার দুর্বল মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলছে, যা অননুমোদিত অভিবাসীদের খোঁজে বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু তাদের পদক্ষেপ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈষম্যমূলক নীতি প্রতিফলিত করে। ভারতের বিজেপি সরকার রাজনৈতিক সমর্থন লাভের চেষ্টা করার সময় নিপীড়িতদের আশ্রয় দেওয়ার ভারতের দীর্ঘ ইতিহাসকে ক্ষুণ্ন করছে।”