বটতৈল-খাজানগর-পোড়াদহ সড়ক-যানবাহনের জন্য মৃত্যু ফাঁদ

এফএনএস | প্রকাশ: ২৫ জুলাই, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
বটতৈল-খাজানগর-পোড়াদহ সড়ক-যানবাহনের জন্য মৃত্যু ফাঁদ

সড়ক মানে শুধু পথ নয়-এটি এক জনপদের প্রাণপ্রবাহ, অর্থনীতির শিরাধারাও বটে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল-খাজানগর-পোড়াদহ সড়কটি যেন সেই শিরাধারায় জমাট বাঁধা রক্তের মতো-অব্যবস্থাপনা, অবহেলা ও অযোগ্যতার প্রতিচ্ছবি। এই সড়ক শুধু একটি রুট নয়, এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল মোকাম খাজানগরের ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান বাহন। অথচ চলাচলের উপযোগিতা হারিয়ে এটি আজ কার্যত মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক, পণ্যবাহী যান, অটো ও ছোট যান এই পথ ব্যবহার করে। অথচ সড়কটি অতিরিক্ত সরু, ভাঙাচোরা এবং কোথাও কোথাও খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাজানগরের চালকলগুলোর দূষিত বর্জ্য, যা জলাবদ্ধ পানিতে মিশে পরিস্থিতিকে করে তুলেছে আরও ভয়াবহ। দুর্ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক; যানজট স্বাভাবিক নিয়ম। চরম দুর্ভোগ শুধু যাত্রীদের নয়-ব্যবসায়ীরাও এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে পণ্য পরিবহনে যেমন সময় বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে খরচ, যার প্রভাব পড়ছে চালের বাজারেও। এর ফলে ভোক্তাও চাপে পড়ছে। এই সড়কের গুরুত্ব এমন যে, অনেক সময় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জাতীয় মহাসড়কের তুলনায় বেশি যান চলাচল লক্ষ্য করা যায় এই পথে। দৈনিক প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ২৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণ করছে, সেটিও অপরিকল্পিতভাবে। যেখানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল, সেখানে এক বছরের বাজেট সীমাবদ্ধতায় খণ্ড খণ্ড কাজ হচ্ছে-যার কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিজস্ব স্বীকারোক্তিতেও স্পষ্ট যে, চলমান ড্রেন আপাতত কোনো কাজে আসবে না। এমন পরিস্থিতি শুধু বটতৈল-খাজানগর-পোড়াদহ সড়কের নয়-এটি দেশের বহু আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সড়কেরই প্রতিচ্ছবি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, ব্যবসায়িক গতি এবং জনগণের নিরাপদ চলাচলের স্বার্থে অবিলম্বে এই সড়কের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার, পর্যাপ্ত প্রশস্তকরণ ও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি, বাজেট সংকট বা অদূরদর্শিতার অজুহাতে জনগণের জীবন, নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে আর কতদিন অবহেলার যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হবে?