সাবেক সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা বিলাসবহুল গাড়িগুলো এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের জন্য দুশ্চিন্তার নাম। নিলামে আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় এসব গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। শুক্রবার (২৫ জুলাই) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এক মতবিনিময় সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
তিনি বলেন, “গাড়িগুলো আমরা নিলামে দিয়েছিলাম। তবে আশানুরূপ ফল পাইনি। এখন কিছু বিকল্প চিন্তা করছি। কিছু সরকারি সংস্থা প্রস্তাব দিয়েছে— তারা ৬০ শতাংশ দামে গাড়িগুলো নিতে চায়। তবে আমরা জলের দরে এগুলো বিক্রি করতে চাই না।”
গাড়িগুলোর প্রতিটির বাজারমূল্য ৮ থেকে ৯ কোটি টাকার মতো উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, উপযুক্ত দাম না পাওয়া গেলে সরকারিভাবে অন্যভাবে ব্যবহারের উপযোগিতা নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “বছরের পর বছর এই গাড়িগুলো স্ক্র্যাপ করে ফেলা ঠিক হবে না। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৎকালীন সংসদ সদস্যরা এই বিলাসবহুল গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেন। পরে ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দিলে শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে এনবিআর। সংসদ সদস্যত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গাড়িগুলো রেখে যান তারা। বর্তমানে এসব গাড়ি পড়ে আছে চট্টগ্রাম কাস্টমসে।
ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম দফায় এসব গাড়ির মধ্যে ২৪টি নিলামের জন্য তোলা হয়। তবে ১০টির জন্য কোনো বিডই পাওয়া যায়নি। বাকি ১৪টি গাড়ির জন্য যা বিড পড়েছে, তা ছিল বাজারমূল্যের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কম— সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। যেমন গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আখতারউজ্জামানের আমদানিকৃত ল্যান্ড ক্রুজার জেডএক্স মডেলের একটি গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য ধরা হয়েছিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, অথচ নিলামে সেটির দর ওঠে মাত্র এক লাখ টাকা। ফলে কাস্টমস সেই গাড়িগুলোর কোনোটি ছাড় দেয়নি।
পরবর্তী নিলামের আইনি জটিলতা নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস ১১ মার্চ এনবিআরকে একটি চিঠি পাঠায়। এতে বলা হয়, দ্বিতীয় দফার নিলামে প্রথম দফার তুলনায় দর আরও কমলে, সর্বোচ্চ দরদাতাকে গাড়ি হস্তান্তর করতে আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। এতে রাজস্ব আদায়ে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, বন্দরে পড়ে থাকা ৬ হাজার কনটেইনারের জট কমাতে এখন থেকে দ্রুত নিলামের মাধ্যমে তা খালাসের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। প্রথম নিলামের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছেই সরাসরি দেওয়া হবে পণ্য।
চট্টগ্রাম সফরে থাকা অবস্থায় তিনি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। সেখানে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নানা প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার বিষয়টি উঠে আসে।
এনবিআরের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও অবস্থান থেকে বোঝা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা মূল্যবান সম্পদগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্য সরকার এখন বিকল্প ও টেকসই সমাধান খুঁজছে। বিলাসবহুল এই গাড়িগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত তাই শুধু প্রশাসনিক নয়, নীতিগত দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।