রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার বাসীন্দারা সেবা নিতে এসে উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। জনবল সংকটের অযুহাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে সেবা দিতে পারছেন না মর্মে উল্লেখ করেছেন। কর্তৃপক্ষ জানান,উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতালে ১ জন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ১ জন ভেটেরিনারি সার্জন, ১ জন উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন) এফ এ (এআই) ১ জন, উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা( প্রাণী স্বাস্থ্য) কমপিউটার ৪ জন, উপসহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) ভি এফ এ, ১ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ১ জন অফিস সহায়ক,১ জন ড্রেসারসহ মোট ১১ জন কর্মকর্তা/কর্মচারি থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে রয়েছেন মাত্র ৬ জন। এর মধ্য থেকে হরি প্রিয়া সরদার নামে ১ জন উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) (ভিএফএ) রয়েছেন প্রশিক্ষণে এবং ড্রেসার পদে থাকা শ্রী রিপন কুমার নামের ১ ব্যক্তি শুরু থেকেই রয়েছেন ঢাকা চিড়িয়াখানায়। এসবের বিপরীতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে ১১টি পদের ৬ জন লোক থাকলেও বাস্তবে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন মাত্র ৪ জন। বাকি ৫ টি পদ শুন্য রয়েছে। জানা গেছে,উপজেলায় নিবন্ধিত গাভীর খামার ৪৫ টি এবং অনিবন্ধিত গাভীর খামার রয়েছে ১ হাজার ৩’শ টি। ছাগলের খামার নিবন্ধিত ১ টি এবং অনিবন্ধিত ৮১ টি। অনিবন্ধিত ভেড়ার খামার রয়েছে ১৫ টি। এই খামার গুলোতে গরুর সংখ্যা রয়েছে ৩১ লক্ষ ২৫ হাজার ৭ টি ,মহিষ রয়েছে ৫’শ টি, ছাগল ১২ লক্ষ ১২ হাজার ১০ টি, ভেড়া ২২ হাজার ৭’শ ২০ টি। এই পশু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টি পশু চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন খামারীরা। বর্তমানে এই উপজেলার অসুস্থ গৃহপালিত পশু-পাখিদের চিকিৎসার এখন একমাত্র ভরসা ভেটেরিনারি সার্জন। তিনি ছাড়া আর কেউ দায়িত্বে না থাকায় জরূরী প্রয়োজনে বা চিকিৎসার কাজে তিনি হাসপাতালের বাইরে গেলে বন্ধ থাকে চিকিৎসা সেবা। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। কয়েকজন সেবা গ্রহীতার সাথে কথা হলে তারা জানায়, হাসপাতালে লোকবল কম থাকায় ভালো সেবা পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় অসুস্থ গরু-ছাগল নিয়ে এসে ডাক্তারের জন্য দীর্ঘক্ষন অপেক্ষায় থাকতে হয়। হাসপাতালটিতে দীর্ঘ দিন ধরে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ( কৃত্রিম প্রজনন) এফ এ (এআই) এবং উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা(প্রাণীস্বাস্থ্য) কম্পাউন্ডার পদটিও শুন্য রয়েছে। এই চিকিৎসকদের সহায়তাকারী ড্রেসারের পদে শ্রী রিপন কুমার নামে একজন নিয়োগপ্রাপ্ত থাকলেও তাকে সংযুক্তি দেখানো হয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। অথচ তিনি এখান থেকে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। অপরদিকে উপ সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) ভিভিএ পদে ৪ জন কর্মরত থাকার কথা থাকলেও ২ জনের পদ শুন্য, ১ জন প্রশিক্ষণে অপরজন রয়েছেন কর্মস্থলে। বর্তমানে ৩ জনই অনুউপস্থিত । অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে একজন থাকার কথা থাকলেও সে পদেও কোন লোক নেই দীর্ঘদিন ধরে।
ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোঃ মিজানুর রহমান বলেন- অসুস্থ প্রাণীর চাপ বেশি থাকায় একার পক্ষে সেবা দেওয়া কষ্টকর। অনেক সময় বড় প্রাণীদের হাসপাতালে আনা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। তখন হাসপাতাল ফাঁকা থাকে। হাসপাতালে ২ থেকে ৩ জন ভেটেরিনারি সার্জন থাকলে উপজেলাবাসীসহ আমাদের সবার জন্য ভালো হতো।
পীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল কবীর বলেন, আমি অল্প কিছু দিন হলো এ উপজেলায় যোগদান করেছি। এখানে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও বর্তমানে ৫ জন নিয়মিত অফিস করনছেন। বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে। অল্প সংখ্যক লোক দিয়েই সাময়িকভাবে সেবা অব্যাহত রাখা হলেও অনেক সময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অবশ্য জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।