বিরলের পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে হঠাৎ আন্দোলনে নেমে পরিষদ চত্ত্বর সরগরম করে তুলেছে কতিপয় ছাত্র-জনতা। মানববন্ধনে মোঃ সজ্জাদ হোসেন, মোঃ আরশাদ হোসেন, মোঃ নিলয় আহমেদ ছোটন, মোঃ মাসুদ রানা, মোঃ জুয়েল রানা, মোঃ নুর আলম, মোঃ আলিম, মোঃ রাকিব বাবু, মোঃ তানভির ইসলাম, মোঃ শাহরিয়ার সুজন, মোঃ গোলাম রাব্বি, মোঃ রাইদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে এসে হয়রানি ও ভাতা প্রাপ্তিতে অর্থ প্রদানের অভিযোগ তুলে ধরে সারাঙ্গাই গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে আরশাদ হোসেন জানান, আমরা এই যে প্রোগ্রামের আয়োজন করেছি এজন্য আমাকে হুমকী প্রদান করা হয়। আমাকে ধরে পায়ের রগ কেটে দিবে। প্রতিজনের বাসায় বাসায় গিয়ে হুমকী প্রদান করে আসছে। আমাকে মনে করে আমার বড় আব্বাতো ভাই মাসুদ রানাকে ধরে আনে ইউনিয়ন পরিষদে বেদমভাবে মারছে। মার দিয়েছে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও বিএনপি নেতাকর্মীসহ ওরা। উনাকে মারলো কেন? মারের পর মাসুদ রানা আমার কাছে দৌড়ায় গেছে।
সারাঙ্গাই (পাহাড়কুড়ি) গ্রামের মাসুদ রানা জানান, আমি গতকালকে রাত ৮ টার সময় বিদ্যুৎ ছিল না কম্পিউটারে টেন্ডারের কাজ করি তাই পরিষদে এসেছিলাম। পরিষদ খোলা দেখে একটা ট্রেড লাইসেন্স হবে কিনা জিজ্ঞাসা করি। এরপর একটা ব্রেঞ্চে বসে বাতাস খাচ্ছিলাম। ওইসময় ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমি কি মানববন্ধন করছি নাকি, আমি বলি না। উনি চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ পর অনেকে উনার সাথে আবার এসে আমাকে জোড়পূর্বক উনার রুমে নিয়ে যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের মোটর (পানির পাম্প) চুরি হয়েছিল কিছুদিন আগে ওইটা মামলায় আমাকে ফাঁসায় দিচ্ছিলো। আবার আমার কলার ধরে মিথ্যা মামলায় থানায় দেয়ার হুমকি দিচ্ছিল। মারধর মানে আমার কলার ধরে এভাবে থাপ্পড় তুলে আবার মারে নাই কিন্তু আমার কানের উপর হাত উঠায় মারের থেকেও বেশি আরকি! আমি কখনও দেখিনাই ইউনিয়ন পরিষদের নিরাপত্তা বাহিনী উপর তলায় থাকে, ওখানে ওদের কাজ কি? ওরা থাকা অবস্থায় কিভাবে মোটর (পানির পাম্প) চুরি হয়? আবার এলাকার ছেলেদের উপর দোষ চাপায়! তিনি আরো বলেন, আমার অভিযোগ আমাদের গ্রামের রাস্তায় এক কোদাল মাটিও দেয়া হচ্ছে না, অথচ অন্যখানে রাস্তার ঢালাইসহ কাজ করা হচ্ছে।
পলাশবাড়ীর কাশেম আলীর স্ত্রী শহর বানু জানান, আমি এক মাসের চালের কার্ডের জন্য মেম্বারের নিকট আসি। আমার কাছে টাকা দাবি করলে ১ বছর আগে কাজী আহসান হাবীব মেম্বারকে পাঁচ হাজার টাকা দেই। উনি বলছে পাঁচ হাজারে হবে না দশ হাজার টাকা লাগবে। আমার জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর নেয়। পাঁচহাজার আগে দেই আর পাঁচ হাজার ওর ভিতরে পরে দেই। টাকা দেয়ার সময় কেউ সাথে ছিল না, একাই ছিলাম। একমাস আগে পরিষদে এসে আবেদনে একটা সই করেছি। এখনও কার্ড হয়নি আমার।
সারাঙ্গাই-পলাশবাড়ী গ্রামের তোবারক আলীর স্ত্রী পারুল আরা জানান, আমার ছেলের এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। তারপর সম্পর্ক বাদ দিয়ে আমার ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। এরপরে টিকটকে আমার ছেলেসহ ওই মেয়ের ছবি দিয়ে ওই মেয়েকে নিয়ে দাবি করে ওই মেয়ে আমার ছেলের স্ত্রী। একমাস আগে বিনা কাবিননামায় মুখের কথা শুনে বিচার করে আমার ছেলেকে সত্তর হাজার টাকা জরিমানা করে। আমি কাউকে বলার সময় পাইনি।
বেণীপুর গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে রশিদুল ইসলাম জানান, আমরা ২৬ জুলাই ২০২৫ তারিখ রাত সাড়ে ৮ টায় ট্রেড লাইসেন্সের জন্য পরিষদে আসি। তখন আরেকজন আসে বলে তোমরা এখন এখানে কেন আসছো। তখন আমি বললাম আমি একটা কাজে আসছি, বসে আছি, কাজটা করে চলে যাবো। কিছুক্ষণ পরে মাসুদ রানাকে মারামারা অবস্থায় পরিষদের ঘরের ভিতরে নিয়ে যায়। আমাকে মারে নাই, মাসুদ রানাকে থাপ্পড় উঠাইছিল, কিন্তু চোড় থাপ্পড় দেয় নাই। মারামারি হয় নাই, শুধু ধমকাইছে, কলার ধরছে, থাপ্পড় দেয়ার মত অবস্থা।
সারাঙ্গাই গ্রামের মৃত আবুল কাশেম এর স্ত্রী আমিনা বেওয়া জানান, আমি বয়ষ্ক ভাতার কার্ডের জন্য এক হাজার পাঁচশত টাকা ২-৩ বছর আগে শহিদুল চৌকিদারকে দেই। আমার কার্ডও করে দেয়নি, টাকাও ফেরৎ দেয়নি। আমার ভাইয়েরা ধর্মপুর থেকে পরে কার্ড করে দিয়েছে, আমি এখন ভাতা পাই। চৌকিদার টাকা ফেরৎ না দেয়ায় এক বস্তা চাল দিতে বলেছি, কিন্তু দেয়নি।
পলাশবাড়ী গ্রামের সামসুল আলমের ছেলে রেজওয়ানুল ইসলাম জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার জাতীয় পরিচয় পত্রে সীল স্বাক্ষর করার পরও আমার টিসিবির কার্ড হয় নাই। স্থানীয় লোকজনের আড্ডা এবং রাতের ৮ টা-১০ টা পর্যন্ত পরিষদ খোলা থাকে কেন। সরকারি নিয়মে অফিস খোলা রাখতে হবে।
একই গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে আহিদুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালে আমার জন্ম নিবন্ধনে বয়স কমানোর জন্য আসি। আমাকে বলে সাতশত টাকা লাগবে। তখন টাকা দিয়ে কাজটি করি। তারপর ২ মাস আগে জন্ম নিবন্ধন কার্ডটা ডিজিটাল করতে আসলে দুইশত টাকা লাগবে বলে। এখন দেখতেছি অনলাইন হয়নি। আবার নতুন করে করতে হবে জানায়। বাবা-মায়ের সহ নতুন করে করতে দুইহাজার চারশত টাকা দাবি করে। এখন টাকাও দিতে পারছিনা কাজও করতে পারছি না। এই টাকাটা আসাদুজ্জামান নয়ন চৌকিদার চাইছিল। মুসাদ্দেক কম্পিউটার অপারেটর চৌকিদারের কথা বলে। এরপর সচিব সাহেবের কাছে গেলে তিনিও চৌকিদারকে দেখিয়ে দেন যে চৌকিদারের সই লাগবে।
সারাঙ্গাই গ্রামের ইসমাইল এর ছেলে সাইফুল ইসলাম জানান, টিসিবির জন্য বারবার আসছি। আমার আইডি ঠিক আছে কিন্তু মোবাইল নম্বরটা ভুল আছে। আমাকে টিসিবির পণ্য দিচ্ছে না। আমার যদিও কার্ড আসছে তারপরও আমাকে কার্ডও দেয় না, পণ্যও দেয় না।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জালাল হোসেন জানান, ভাতাভোগী নির্ণয়ে কমিটি আছে। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তালিকা তৈরী করা হয়। পরিষদে কাউকে মারপিট করা হয়নি। কেউ কোন চৌকিদার বা মেম্বারের বিষয়ে আমাকে কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ ব্যাক্তিস্বার্থ হাসিলের হীন উদ্দেশ্যে বানোয়াট কিছু বললে আপনারা যাচাই-বাছাই করে তা তুলে ধরবেন। জনগণের সেবা প্রদানে আমি এবং আমার পরিষদের সকলে অঙ্গিকারবদ্ধ।