বাংলাদেশের সরকার গঠন ও নির্বাচন অভ্যন্তরীণ বিষয়: ডিক্যাব টকে চীনা রাষ্ট্রদূত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৯ জুলাই, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম
বাংলাদেশের সরকার গঠন ও নির্বাচন অভ্যন্তরীণ বিষয়: ডিক্যাব টকে চীনা রাষ্ট্রদূত

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সরকার গঠন কিংবা নির্বাচন কবে হবে—এটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে বিদেশি কোনো পক্ষের মন্তব্য করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনীতিক হিসেবে তিনি এ বিষয়ে মতামত প্রকাশ করতে পারেন না। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চীন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারার বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে ইয়াও ওয়েন জানান, বিগত ১০ বছরে এ দুই দলের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছিল। তিনি বলেন, “আমরা আগেও সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলাম, তবে সে সময় বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। এখন সময় এসেছে, তাই আমরা আবারও সংলাপ ও সফর বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছি।”

প্রসঙ্গত, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি চীন সফর করে। একইভাবে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বেও একটি দল চীন সফরে যায়। এসব সফর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণেই হয়েছে বলে রাষ্ট্রদূত জানান।

সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় চীনের অবস্থান জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, “আমরা এই দুর্ঘটনায় শোকাহত। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে চীন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। খুব শিগগিরই চীনের কারিগরি বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসবে।” তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকার চাইলে চীন তদন্তে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে ইয়াও ওয়েন বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন। রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এখনই প্রত্যাবাসন সম্ভব না হলেও, চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।”

বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েও রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জবাবে ইয়াও ওয়েন বলেন, “চীন বহু দেশের সঙ্গেই সহযোগিতা করে। বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান মিলিয়ে ১২টি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।”

চীনের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, বহুপক্ষীয় সম্পর্ক এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধে ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র এবং তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার একমাত্র এখানকার জনগণের।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে