জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে এক আলোচনা ও তথ্য প্রদর্শনীতে উপস্থিত হয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাব এখনো প্রতিশোধপরায়ণ। তিনি অভিযোগ করেন, এতবড় হত্যাকাণ্ডের পরও শেখ হাসিনার কণ্ঠে অনুশোচনার লেশমাত্র নেই। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনায় ড. আসিফ নজরুল বলেন, “শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তিনি এখনো প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা ধারণ করছেন। এত বড় গণহত্যার পরও তার মধ্যে অনুশোচনা নেই। যুদ্ধক্ষেত্রেও যদি কেউ গুলি খেয়ে পড়ে থাকে, তাকে চিকিৎসা না দেওয়া অপরাধ। অথচ এই সরকার যা করেছে, তা ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বাহিনীর চেয়েও জঘন্য।”
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা নৃশংসতা করলেও, তখন লাশ পুড়িয়ে ফেলেছে—এমন ভিডিও ফুটেজ বা বর্ণনা তিনি দেখেননি। অথচ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশের মাটিতে এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে গুলিবিদ্ধ মানুষকে উদ্ধার না করে আরও গুলি চালানো হয়েছে এবং মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার বিষয়ে তিনি বলেন, “এই বিচার আল্লাহর প্রতি আমাদের দায়। এটি কোনো রাজনৈতিক কৌশল নয়, এটা আমাদের বিশ্বাসের জায়গা। আমি আমার পিএইচডি থিসিসের পেছনে যতটা শ্রম দিয়েছি, তার চেয়েও বেশি মনোযোগ দিচ্ছি এই বিচারে।” তিনি জানান, তার বিশ্বাস, এই সরকারের আমলেই প্রত্যাশিত রায় পাওয়া যাবে।
তিনি আশ্বস্ত করেন, এমন প্রমাণ ও ভিত্তি রেখে বিচার প্রক্রিয়া এগোচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতের কোনো সরকার এসে সেটি পরিবর্তন করতে না পারে। এমনকি বিএনপি-জামায়াতও যদি ক্ষমতায় আসে, তারাও এই বিচার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবে না। কারণ, তারাও নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং এই বিচার তাদের নৈতিক দায়িত্ব।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম প্রসঙ্গে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “তাজুলের মতো লোক হাজার কোটি টাকায়ও কেনা যাবে না। তিনি গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেন। একটিমাত্র প্রমাণ পেলেই এসে জানান, ‘স্যার, এটা পেয়েছি।’ তার নিষ্ঠা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ভুল করতেই পারি। ব্যর্থতা, অজ্ঞতা আমাদের থাকতে পারে। কিন্তু আমরা আন্তরিক চেষ্টা করছি। বিচার যাতে ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
আসিফ নজরুল জানান, “আমি ধার্মিক মানুষ, সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন এই বিষয়ে জবাবদিহি করতে পারি। আমি কোনো রাজনৈতিক দায়িত্বে নেই, কিন্তু এই বিচার নিয়ে যে দায় আমি অনুভব করি, তা একান্তই আত্মিক ও ধর্মীয়। ইনশাআল্লাহ আমি পারব।”
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আইন উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জুলাই গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি যেমন উঠে আসে, তেমনি এর পেছনের রাজনৈতিক এবং নৈতিক দায়বোধও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।