আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ৬ আগস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৩০ জুলাই, ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ৬ আগস্ট

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে বুধবার (৬ আগস্ট)।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এর তিন সদস্যের বেঞ্চ এই তারিখ ধার্য করে। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এই মামলায় মোট ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন এখনও পলাতক। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে এবং তাদের হাজিরের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।

বুধবার শুনানির সময় গ্রেপ্তার ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন—সাবেক এসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশ, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ আপিল।

এই ছয়জনের মধ্যে সুজন চন্দ্র রায়, শরিফুল ইসলাম ও ইমরান চৌধুরীর পক্ষে বুধবার অব্যাহতির আবেদন করে শুনানি হয়। আগের দিন মঙ্গলবার বাকি তিনজনের পক্ষে একই আবেদন করে শুনানি হয়।

প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন কৌঁসুলি মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, “অভিযোগ গঠনের শুনানিতে আমরা পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছি, কাদের কী ভূমিকা ছিল। অডিও, ভিডিও, সিসিটিভি ফুটেজসহ নানা তথ্যপ্রমাণ আমরা আদালতে পেশ করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “কমান্ড রেসপনসিবিলিটি মানেই সরাসরি উপস্থিতি নয়, বরং কমান্ড স্ট্রাকচারের মাধ্যমে দায়িত্বশীলতা নির্ধারিত হয়। আমরা দেখিয়েছি, কে কাকে নির্দেশ দিয়েছে, কার অধীনে কে ছিল।”

এর আগে সোমবার প্রসিকিউশন পক্ষে প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অভিযোগ গঠনের আবেদন উপস্থাপন করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ৩০ জুন। সেইসঙ্গে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে আদালত। তদন্ত সংস্থার দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় ৩০ জন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।

গত ১৬ জুলাই বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বিরুদ্ধে পুলিশের গুলি, প্রশাসনের নীরবতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

আবু সাঈদের মৃত্যু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। আন্দোলন রূপ নেয় গণবিক্ষোভে। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর থেকেই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে একের পর এক মামলা দায়ের হয়। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডকে এই ধারাবাহিকতার একটি বড় উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এসব মামলার বিচার করছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে