নওগাঁয় একটি হত্যা মামলায় এক নারী ও এক পুরুষের মৃত্যুদন্ড এবং পৃথক ধর্ষণ ও পর্ণগ্রাফি মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক (জেলা জজ) মেহেদী হাসান তালুকদার জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জেলার বদলগাছী উপজেলার পূর্ব খাদাইল গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী পিংকি বেগম (৩০) ও আজম আলী মন্ডলের ছেলে মিশু মন্ডল (১৯)। এ মামলায় হুজাইফা (১৪) ও সাজু আহমেদ (১৪) নামে দুই শিশুকে ১০ বছরের আটকাদেশও দেয়া হয়।
রায়ে পিংকি বেগম ও মিশু মন্ডলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৮ ধারা ও দন্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারায় মহামান্য হাইকোর্টের মাধ্যমে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং দন্ডবিধি আইনের ২০১ ধারায় ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামীরা এজলাশে উপস্থিত ছিলেন।
মামলায় সংক্ষিপ্ত বিবরণে প্রকাশ, বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে স্কুলছাত্র নাজমুল হোসেনের (১৪) সাথে পাশের গ্রামের গৃহবধূ পিংকি বেগম অবিবাহিত পরিচয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর পিংকি বেগম মোবাইলফোনে নাজমুলকে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার কেসের মোড় রেল লাইনের কাছে ডেকে নিয়ে অপহরণ করে তার পিতার কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেয়ে পরদিন অপর আসামীদের সহযোগিতায় নাজমুলকে হত্যা করে মরদেহ বস্তায় ভরে আক্কেলপুর রেলগেটের উত্তরপাশের ডোবায় ফেলে দেয়। নাজমুলের পিতা এব্যাপারে বদলগাছী থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌশলী এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম এবং আসামীপক্ষে এ্যাডভোকেট সাইদ হোসেন আল মুরাদ ও এ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহেল কাফি মামলাটি পরিচালনা করেন।
একই আদালত অপর মামলায় নওগাঁর মান্দায় এক স্কুলছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে ধর্ষণদৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে রেখে পরে ওই স্কুলছাত্রীর বিয়ের পর তার স্বামীর মোবাইলে সরবরাহের দায়ে দুজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। এরা হলেন, মান্দা উপজেলার চকদেবীরাম গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম ও বালুবাজার গ্রামের মৃত জাইদুর রহমানের ছেলে মোরশেদুর রহমান।
রায়ে বিজ্ঞ বিচারক আসামী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড, একই আইনের ২০১২ সালের ৮(১) ধারায় ৭ বছর কারাদন্ড ও ২ লক্ষ টাকা জরিমানা, ৮(২) ধারায় ৫ বছর কারাদন্ড ও ২ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং আসামী মোরশেদের বিরুদ্ধে ৯(১)/৩০ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন। বিজ্ঞ বিচারক এই মামলার অপর আসামী সুলতানা বেগমকে বেকসুর খালাস দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামীরা এজলাশে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে প্রকাশ, উপজেলার চকদেবীরাম গ্রামে এক স্কুলছাত্রীকে আসামী রবিউল ইসলাম প্রেমের ফাঁদে ফেলে ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আসামী মোরশেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করে এবং সে দৃশ্য মোবাইলফোনে ভিডিও করে রাখে। পরে রবিউল ওই স্কুলছাত্রীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। ছাত্রীর পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দেন। কিন্তু রবিউল ধর্ষণদৃশ্য তার স্বামীর মোবাইলে পাঠালে তার স্বামী তাকে তালাক দেয়। পরিবার তাকে দ্বিতীয়বার অন্যত্র বিয়ে দিলে রবিউল সেখানেও ওই ভিডিও পাঠায়। ফলে সে সংসারও ভেঙ্গে যায়। এরপর ওই ছাত্রী নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌশলী এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম এবং আসামীপক্ষে এ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদ ও এ্যাডভোকেট আতিয়ার রহমান মামলাটি পরিচালনা করেন।