পাইকগাছায় দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন

এফএনএস (মহানন্দ অধিকারী মিন্টু; পাইকগাছা, খুলনা) : | প্রকাশ: ১ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম
পাইকগাছায় দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন

খুলনার আঠারো মাইল-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক সংস্কারের দাবিতে শুক্রবার সকাল ১১টায় নাগরিক ফোরাম এর উদ্যোগে ফকিরবাসা মোড় সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় নাগরিক ফোরাম(পাইকগাছা-কয়রা) ব্যানারে দাবী জানানো হয় খুলনা-৬ আসনে স্থানীয় প্রার্থী। স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বহিরাগত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। বিএনপি নেতা শেখ সাদেকুজ্জামান সাদেকের সভাপতিত্বে ও অ্যাড. মাহমুদ জাহিদ আল কাদির (বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট হাইকোর্ট ডিভিশন) এর সঞ্চালনায় সড়ক সংস্কারের দাবীতে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা শেখ আবু তালেব, অ্যাড. দিপঙ্কর সাহা, সাংবাদিক এইচ এম শফিউল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, হুমায়ন কবির, হাবিবুর রহমান, ফারুক হোসেন, আখতার হোসেন ও মিজানুর মজলিস প্রমুখ। স্থানী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার শত শত মানুষ বৃষ্টি উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময় ধরে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাক সরলীকরণের নামে রাস্তার যে বেহাল দশা হয়েছে তা দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। তা না হলে সারা দেশের সাথে পাইকগাছা-কয়রার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। দ্রুত সময়ে মধ্যে সংস্কার না হলে অচিরেই কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। উল্লেখ খুলনা জেলার বেতগ্রাম-পাইকগাছা-কয়রা সড়কটি প্রশস্ত ও বাঁক সরলীকরণের জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয় একটি প্রকল্প। ওই প্রকল্পের অধীনে সড়কটি ৩৭টি বাঁক সরলীকরণের মধ্যে তালা উপজেলার অংশে ৭টি বাঁক সরলীকরণ হলেও পাইকগাছা-কয়রা'র অংশ ৩০টি খুলনা জেলা প্রশাসনের গাফিলতির জন্য এখনও জমি অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি। এছাড়া ঠিকাদারের উদাসীনতায় কয়েকবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও এ প্রকল্পের মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে ৪০ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না করায় ৩৯ কোটি টাকা ফেরৎ যাচ্ছে। খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলার বেতগ্রাম পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটারের এ সড়কটি শেষ হয়েছে খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কে। সড়কের কিছু অংশ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মধ্যে পড়েছে। খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন সড়কটি 'যথাযথ মানে উন্নীতকরণ' প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুমতি পায় মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। পরে তা বেড়ে ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখে এসে দাঁড়ায়। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। প্রকল্পের প্রতিটি প্যাকেজে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় মেয়াদ শেষের আগে তা নষ্ট হতে বসেছে। আবার চার উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা বাঁকও সরলীকরণ না হওয়ায় প্রকল্পের কোনো সুফল পাচ্ছে না। এমনকি কাজে গাফিলতির কারণে সড়কে চলাচল প্রায় সময় বন্ধ থাকছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকল্পের কাজের ঠিকাদার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চাচাত ভাই শেখ হেলালের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ঠিকাদারের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় কাজ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে কাজের মেয়াদ ও বরাদ্দ বাড়াতে ধীরগতির কৌশলে এগিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁক সরলীকরণ কাজ ঠিক মত না হওয়ায় সেখানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে এসব গর্তে পানি জমে পরিণত হচ্ছে মরণফাঁদ। ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। সড়কের কিছু স্থানে কার্পেটিংয়ের কাজ করা হলেও ঢালাই উঠে গর্ত দেখা দিয়েছে। কয়রা ও পাইকগাছা প্রকৌশলীকে উক্ত জানতে চাহিলে তারা সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নন মর্মে জানান। খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. তানিমুল হক জানিয়েছেন, ৬৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কে ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এ বাঁকগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরা অংশের ৪টিতে জমি অধিগ্রণ হয়েছে। আর খুলনা অংশের কাজ অসম্পন্ন রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজ আটকে থাকার জন্য খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উদাসীনতাকে দায়ী করে তানিমুল হক বলেন, জেলাপ্র্রশাসকের প্রতিটি সমন্বয় সভায় এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয় না। সর্বশেষ জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে বলা হলে তিনি এ প্রকল্পকে 'গুরুত্বহীন' বলে এড়িয়ে গেছেন। খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, শিগগিরই জমি অধিগ্রহণের জটিলতা কেটে যাবে। এ ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চলছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে