তিন মাস নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় গত মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে আবারো শুরু হয়েছে মাছ আহরণ। রোববার (৩ আগষ্ট) ভোর থেকে রাঙ্গামাটি বিএফডিসির ৪টি ঘাটে কাপ্তাই হ্রদের আহরিত মাছ আসতে শুরু করেছে। মধ্যরাত থেকে মাছ আহরণের কারণে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। সকালে মিলাদ ও দোয়ার মাধ্যমে মাছের ওজন নেয়া শুরু হয়। আর প্রতি বছর এই হ্রদ থেকে বিপুল পরিমাণ মাছ আহরণ হয়, যা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
গত ১ মে থেকে হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, বিকাশ নিশ্চিতে এবং হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের আধিক্য বাড়াতে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর কাপ্তাই হ্রদে তিন মাসের জন্য হ্রদের মাছ শিকার ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো জেলা প্রশাসন। তবে গত ২৮ জুলাই কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত সভায় ৩১ জুলাই পর্ষন্ত মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা মেয়াদ শেষ হলেও হ্রদে মাছ শিকারের সামগ্রিক প্রস্তুতি না থাকায় আরও দুই দিন বাড়িয়ে শনিবার রাত ১২টা পর্ষন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
তবে গত মধ্যরাত থেকে মাছ ধরা হলে দেখা যায় কাপ্তাই হ্রদের নতুন পানিতে কাচকি ও চাপিলা মাছের সাইজ ছোট হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা বলছে সমপ্রীতি বৃষ্টি ও হ্রদের পানি বৃদ্ধির ফলে বড় মাছগুলো সব মারা গেছে। নতুন এই পোনা মাছ যদি আরো ১৫ দিন পর ধরা হতো তাহলে যে মাছ এখন ১ কোটি টাকা বিক্রি হবে তা ৪ কোটি টাকার বেশী বিক্রি হতো।
রাঙ্গামাটি বিএফডিসি ম্যানেজার কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, দীর্ঘ ৩ মাস ২ দিন পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কাপ্তাই হ্রদে সকল প্রকার মাছ আহরণ, বাজারজাত ও পরিবহণে নেমেছে জেলেরা। এতে করে ভোর ৬টা থেকে রাঙ্গামাটির ৪টি ল্যান্ডিং ঘাটে আবারো কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। আর এর জন্য বিএফডিসি থেকে সার্বিক প্রস্তুতি হিসেবে সকল অবতরণ ঘাটগুলোতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করি গত বছরের তুলনায় এবছর লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দেওয়া হয়। এই বাঁধের ফলে ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশাল জলধার সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার মানব সৃষ্ট সর্ববৃহৎ এই হ্রদের কারণে রাঙ্গামাটি জেলায় ৫৪ হাজার কৃষি জমি পানিতে ডুবে যায়। আর এই হ্রদের ফলে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট থেকে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন করে বিপুল রাজস্ব আয় হচ্ছে। এই হ্রদে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৭ হাজার জেলে।