রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন জানে আলম অপু। তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পূর্ণঘরদীঘি গ্রামের বাসিন্দা।
রাজনীতির মঞ্চে নিজেকে ‘জনতার নেতা’ হিসেবে তুলে ধরলেও বাস্তবের জানে আলম অপু ছিলেন এক বিতর্কিত মুখ। নানা সময় আন্দোলন, মানববন্ধন, বক্তৃতা আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপ্লবী সুরে উচ্চকণ্ঠ হওয়া অপু এবার গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
৪ আগস্ট সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জানে আলম অপু একসময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ঢাকার গ্রীন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়ে যুক্ত হন বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে তিনি পরিচিতি পান। সেখান থেকেই তাঁর রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয়।
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান অপুর জীবনধারা হঠাৎ করেই পাল্টে যায়। তিনি দামি পোশাক, প্রাইভেট কার ও রাজনীতিক-প্রশাসনিক মহলের সঙ্গে ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে উপস্থাপন করতেন। এমনকি জয়পুরহাটে এসে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছাও গ্রহণ করেছিলেন।
অপু একসময় ছাত্রদলের রাজনীতি করলেও ২০২২ সালের দিকে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে তিনি বিভিন্ন দলের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু করেন এবং এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হন। গত মাসেও এনসিপির একটি পদযাত্রার প্রোগ্রামে জয়পুরহাটে এসেছিলেন তিনি।
তাঁর গ্রামের বাড়ি পূর্ণঘরদীঘি গ্রামে গিয়ে জানা যায়, অপু গ্রামের বাড়িতে থাকতেন না। তাঁর বাবা আনোয়ার হোসেন ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন এবং বহু বছর আগেই মারা গেছেন। মা অন্যত্র বিবাহিত হওয়ায় অপু ছোটবেলায় কাঁঠালবাড়ি গ্রামে নানার বাড়িতে ছিলেন। সেই সময় থেকেই তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদশা বলেন,"অপু আমাদের গ্রামের ছেলে। তার বাবা ঢাকায় চাকরি করতেন, অপুর জন্মও ঢাকাতেই। বাবার মৃত্যুর পর তার মা অন্যত্র বিয়ে করেন। মাঝে মাঝে সে গ্রামের বাড়িতে আসত, তবে বন্ধুর বাড়িতে থাকত। কারণ, তার বাড়িটি বসবাসের অনুপযোগী-চারদিকে ময়লা-আবর্জনা ও ঘাসে পরিপূর্ণ। গুলশানে এমপির বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের খবর শুনে আমরা হতবাক নই, তবে লজ্জিত ও ব্যথিত। সে দোষী হলে তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।"
অপুর নানী আখলাকুন্নেসা বকুল বলেন,"মায়ের বিয়ের পর অপু আমাদের গ্রামে আর তেমন আসেনি। ছোটবেলায় কিছুদিন থাকলেও এরপর যোগাযোগ রাখেনি।"
অপুর মামী জেসমিন আক্তার বলেন,"জানতাম, ভাগিনা ঢাকায় অনেক বড় নেতা হয়েছে। সে অভিভাবকহীন ছিল এবং আমাদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ রাখত না। শুনেছি, সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।"
আক্কেলপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দেওয়ান তানভীন নেওয়াজ বলেন,"অপু একসময় ছাত্রদল করত, কিন্তু নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে সে নানা পরিচয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছায়ায় চলতে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে বড় নেতা হিসেবে তুলে ধরত, যা চাঁদাবাজির মতো অপরাধে উৎসাহ দিয়েছে।"
ছাত্রদলের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরমান হোসেন বলেন, "অভ্যুত্থানের কিছুদিন পর থেকেই অপুর জীবনধারায় পরিবর্তন আসে। সে দামি গাড়ি ও প্রভাবশালী ছবি দেখিয়ে নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করত। তার প্রধান আয়ের উৎস ছিল তদবির ও চাঁদাবাজি। সে এই জেলার মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করেছে।