রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে প্রথমবারের মতো পদোন্নতি নীতিমালা

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম | প্রকাশ: ৬ আগস্ট, ২০২৫, ০১:০১ পিএম
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে প্রথমবারের মতো পদোন্নতি নীতিমালা

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কোনো সমন্বিত ও নির্দিষ্ট কাঠামো ছিল না। এতে প্রশাসনিক জটিলতা, মূল্যায়নে বৈষম্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছিল। এসব দূর করতেই সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পদোন্নতি ব্যবস্থায় প্রথমবারের মতো একটি কাঠামোগত রূপ এনে দিল।

অর্থ মন্ত্রণালয় গত সোমবার (৪ আগস্ট) এই নীতিমালার সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, আর্থিক খাতে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও জনসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

নতুন নীতিমালাটি ৯ম গ্রেড থেকে ৩য় গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য প্রযোজ্য হবে। এর আওতায় আসছে সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

এই নীতিমালার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত মানদণ্ডের পরিষ্কার ব্যাখ্যা। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রেডভিত্তিক জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে এবং তা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনসাপেক্ষে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা, সন্তোষজনক চাকরির রেকর্ড, মেধা, কর্মদক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সততা এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি নির্ধারিত হবে। তবে স্নাতক ডিগ্রির নিচে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে, সেই প্রার্থী পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় আসবেন না।

পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত হয়েছে নম্বর বিভাজনের একটি স্পষ্ট কাঠামো— লিখিত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ, মৌখিক পরীক্ষায় ৩০ শতাংশ এবং চাকরির রেকর্ড ও প্রশিক্ষণ বিবেচনায় ২০ শতাংশ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। এই তিনটি অংশ মিলিয়ে নির্ধারিত ন্যূনতম নম্বর অর্জন করতে হবে।

অন্যদিকে, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি বিভাগীয় মামলা বা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় অভিযুক্ত হন বা ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার হন, তবে চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত তিনি পদোন্নতির যোগ্য বিবেচিত হবেন না। লঘুদণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এক বছর এবং গুরুদণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত পদোন্নতির অযোগ্যতা বহাল থাকবে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, যদি কোনো কর্মকর্তা ধারাবাহিকভাবে তিনবার পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হয়েও উত্তীর্ণ না হন, তবে তার বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি বিশেষ বোর্ড গঠন করা হবে।

এই নীতিমালার মাধ্যমে সরকারি ব্যাংকগুলোতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা ও অভিযোগ ছিল, তা অনেকটাই নিরসন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি শুধু প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে না, বরং ব্যাংক খাতে কর্মীদের দক্ষতা ও মান উন্নয়নের দিকেও একটি ইতিবাচক ধাপ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে