রংপুরের বিশিষ্ট সাংবাদিক, সমাজসেবক, সংগঠক ও মানবিক কাজে আজীবন সক্রিয় থাকা রণাঙ্গনের যোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন অবশেষে হার মানলেন দুরারোগ্য ক্যান্সারের কাছে। চলে গেলে না ফেরার দেশে।
বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল সোয়া ১০টার দিকে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মরহুমের ভাতিজা রেজওয়ান হোসেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগে ভুগছিলেন। সর্বশেষ তিনি রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিসিইউতে লাইফসাপোর্টে ছিলেন।
রংপুর নগরীর নীলকণ্ঠ সোটাপীর এলাকায় আকবর হোসেন এর জন্ম। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশমাতৃকার টানে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন তিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি ছিলেন জাতীয় ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের নেতৃত্বে। সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘদিন। তিনি রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক (১৯৮২ু৮৩) ছিলেন। প্রতিষ্ঠাতাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বৃহত্তর রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক (১৯৭২ু৭৫), সুজন রংপুর জেলার সভাপতি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির জেলার সাধারণ সম্পাদক, প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বধির সংঘের সভাপতি ছিলেন। শিক্ষানুরাগী হিসেবে আকবর হোসেন লায়ন্স ক্লাব রংপুরের প্রেসিডেন্ট ও লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি, নীলকণ্ঠ নিউ মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। শিক্ষা অনুরাগী হিসেবে তিনি রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, শিখা সংসদের সাধারণ সম্পাদক, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় লেখক পরিষদের উপদেষ্টা ও সম্মিলিত লেখক সমাজ রংপুরের উপদেষ্টাসহ নানা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
এদিকে, বীরমুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাহিত্য সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনে। তার জানাজার নামাজের সময় সূচি এখন চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে নীলকণ্ঠ সোটাপীর এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
সুজন মহানগরের সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ওনার সঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন করেছি। তিনি আমাদের অভিভাবক ছিলেন। ওনার পরামর্শে আমরা কাজ করেছি। উনি একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন। ওনাকে হারিয়ে আমরা সত্যিকার অর্থে একজন অভিভাবক হারালাম।
প্রয়াত আকবর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট জোবায়দুল ইসলাম বুলেট বলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেনের মৃত্যুতে আমরা পরোপকারী প্রকৃত অভিভাবক হারাইলাম। তিনি আমাদের সবসময় আপদে বিপদে আগলে রাখতেন। তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো, যা পূরণ হওয়ার মতো নয়।
প্রাবন্ধিক ও প্রয়াত আকবর হোসেনের বন্ধু রেজাউল করিম মুকুল জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পথচলা। এক সঙ্গে বেড়ে ওঠা। তিনি আমাদের বন্ধু হলেও অভিভাবক ছিলেন আমাদের। আমরা ওনাকে হারিয়ে গভীরভাবে শোকাহত।