পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায় একটি সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পরিবেশমন্ত্রীর মৃত্যুসহ আটজন প্রাণ হারিয়েছেন। বুধবার (৬ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১২ মিনিটে রাজধানী আক্রা থেকে অবৈধ খননবিরোধী একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী দিনটি ছিল বুধবার (৬ আগস্ট)।
হেলিকপ্টারটি দক্ষিণাঞ্চলের সেন্ট্রাল আশান্তি অঞ্চলের ঘন বনাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট জন ড্রামানি মাহামা তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন এবং বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) থেকে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ড. এডওয়ার্ড ওমানে বোয়ামাহ, যিনি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। চিকিৎসক পেশাজীবী এ মন্ত্রী এর আগে যোগাযোগ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেছেন। পশ্চিম আফ্রিকায় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তিনি ছিলেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর।
এছাড়াও, পরিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইব্রাহিম মুরতালা মুহাম্মদ নিহতদের মধ্যে অন্যতম। তিনি দেশজুড়ে পরিবেশ ধ্বংসকারী অবৈধ স্বর্ণ খনন, যা স্থানীয়ভাবে 'গালামসে' নামে পরিচিত, তা দমনে সরকারের জোরালো অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এ ছাড়া তিনি নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত আফ্রিকান পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী সম্মেলনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং প্লাস্টিক দূষণবিরোধী একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে আগামী সপ্তাহে জেনেভায় জাতিসংঘের আয়োজনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার।
নিহত অন্য ব্যক্তিরা হলেন সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা সমন্বয়ক ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আলহাজি মুনিরু মোহাম্মদ, এবং ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস (এনডিসি) দলের ভাইস চেয়ারম্যান স্যামুয়েল সারপং। এছাড়া হেলিকপ্টারে থাকা তিনজন ক্রু সদস্যও নিহত হয়েছেন।
ঘানার সশস্ত্র বাহিনী জানায়, একটি Z-9 মডেলের সামরিক হেলিকপ্টার আক্রা থেকে ওবুয়াসি শহরে যাত্রা শুরু করে। উদ্দেশ্য ছিল অবৈধ খননকার্য বন্ধে আয়োজিত একটি সরকারি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই হেলিকপ্টারটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়। পরে বনাঞ্চলে হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও টেলিভিশন চ্যানেল 'জয় নিউজ'-এ প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, দুর্ঘটনাস্থলে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন একটি জঙ্গল এবং ছিন্নভিন্ন হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ।
দুর্ঘটনার সঠিক কারণ এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। সেনাবাহিনী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যারা ইতোমধ্যেই অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছে।
প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ জুলিয়াস ডেবরাহ এক বিবৃতিতে বলেন, “জাতির সেবায় নিজেদের উৎসর্গকারী আমাদের সহযোদ্ধা ও সেনা সদস্যদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি।” একইসঙ্গে ইকোওয়াস (ECOWAS) এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন থেকেও এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতি শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে জাতিসংঘ পরিবেশ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসন টুইট করে জানান, “ইব্রাহিম মুরতালা মুহাম্মদ একজন নিবেদিতপ্রাণ পরিবেশবাদী ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নেতা ছিলেন। তার মৃত্যু শুধু ঘানার নয়, পরিবেশ আন্দোলনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”