টাঙ্গাইলের ৪০ লাখ মানুষ সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সেবা পাচ্ছেনা

এফএনএস (টাঙ্গাইল) : | প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:২৪ পিএম
টাঙ্গাইলের ৪০ লাখ মানুষ সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সেবা পাচ্ছেনা

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ(নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) নেই। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আইসিউ কক্ষ থাকলেও তা বন্ধ রয়েছে। বড় দুটি সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা না থাকায় রোগীদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। ফলে জেলার ৪০ লাখ মানুষ আইসিইউ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপতালে এখন পর্যন্ত আইসিইউ বিভাগ চালুই করা হয়নি। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ কক্ষ প্রস্তত থাকলেও জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক রোগীরা। রোগীর স্বজনদের অর্থের অপচয়ও হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তি এবং হয়রানির মধ্যে পড়ছে আইসিইউ সেবাপ্রার্থীরা। অনেক রোগীই ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন। জেলাবাসী ওই দুটি  সরকারি হাসপাতালে দ্রুত আইসিইউ সেবা চালু করার দাবি জানিয়েছে। 

জানা যায়, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক রোগী ভর্তি হন। প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম না থাকায় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি এ হাসপাতালে ৫৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১২ জনের পদ শূণ্য রয়েছে। এছাড়া ১৭ জন নার্স, ৩ জন প্যারামেডিকস, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ৩ জন কর্মচারী এবং চতুর্থ শ্রেণির ৩০ জন কর্মচারীর পদ খালি রয়েছে। ফলে হাসপাতালের কার্যক্রম চালাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে জেনারেল হাসপাতালের ২য় তলায় ১০শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ স্থাপন করা হয়। সেটা  কিছুদিন সচল ছিল। তখন অনেক জটিল রোগী আইসিইউ সুবিধা পেয়েছেন। এরপর করোনার প্রভাব চলে যাওয়ায় আইসিইউ সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এখন যেসব রোগীর আইসিইউ সেবা প্রয়োজন তাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকায় পাঠানো রোগীর ক্ষেত্রে অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়ছে। 

সূত্রমতে, সম্প্রতি টাঙ্গাইলের কালিহাতীর যদুরপাড়া গ্রামের খোকন মিয়া মোটরসাইকল দুঘর্টনায় গুরুতর আহত এবং নাগরপুরের আনোয়ার হোসেনের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে তাৎক্ষণিকভাবে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাদেরকে ঢাকায় প্রেরণ করেন। এছাড়া উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ফলে গুরুতর আহত রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে ঢাকায় যেতে বাধ্য হন। 

রোগী বহনকারী টাঙ্গাইল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মিয়া জানান, টাঙ্গাইল থেকে গুরুতর রোগীদের সাধারণত ঢাকা মেডিকেল, হৃদরোগ হাসপাতাল, নিউরো হাসপাতাল এবং পঙ্গু হাসপাতাল ইত্যাদিতে নেওয়া হয়ে থাকে। টাঙ্গাইলের সরকারি হাসপাতালে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮টি অ্যাম্বলেন্স রোগী নিয়ে ঢাকায় যায়। তবে তাদের বাইরেও অন্যান্য বাহনযোগে আরো রোগী ঢাকায় চলে যান। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ খালেদ জানান, টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় ৪০ লাখের উপরে মানুষের বসবাস। দুর্ঘটনা বা জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ খুবই প্রয়োজন। এমন রোগী হাসপাতালে এলেই চিকিৎসকরা তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এখানে আইসিইউ সেবা নেই এটা খুবই দুঃখজনক। দ্রুত আইসিইউ সেবা চালু করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত নজর দেওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। 

টাঙ্গাইল জেলারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাদিকুর রহমান জানান, ১০ শয্যার আইসিইউ চালু করার সব কিছুই প্রস্তত রয়েছে। শুধু চিকিৎসক ও স্টাফ নার্সের অভাবে বন্ধ রয়েছে। আইসিইউ বিভাগ চালু করতে ১ জন অবেদনবীদ, ১ জন মেডিকেল অফিসার, ৩ জন নার্স, ২ জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট, ৩ জন ওয়ার্ডবয়, ২ জন  আয়া ও ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর তাগাদাপত্র ও কিছু সরঞ্জামের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো পেলেই আইসিইউ চালু করা সম্ভব হবে। 

তিনি জানান, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চাইতে অনেক বেশি রোগী ভর্তি হন। অন্যদিকে, ডাক্তার-নার্স সংকট রয়েছে। ফলে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে তাদের প্রতিনিয়িত অসুবিধা হচ্ছে।  

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আব্দুল কদ্দুস জানান, চিকিৎসক সংকট এবং অবকাঠামোগত কারণে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ সেবার ব্যবস্থা নেই। জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ কক্ষ থাকলেও জনবল সংকটের কারণে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী ভর্তি হয়ে এবং প্রায় হাজার রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ জন গুরুতর রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হলে জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ চালু করা প্রয়োজন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে