শিক্ষার অস্বাভাবিক খরচে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৮:২৪ এএম
শিক্ষার অস্বাভাবিক খরচে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

শিক্ষা উপকরণের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে শিক্ষা উপকরণের ব্যয় নিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে ২০  থেকে  ৫০  শতাংশ  পর্যন্ত বই-খাতা,  স্কুলের  পোশাক-ব্যাগসহ  সিংহভাগ  শিক্ষা  উপকরণের  দাম  বেড়েছে ।  মানভেদে  এখন ১২৮  পৃষ্ঠার  একটি  খাতার  দাম   ৫০  থেকে  ৭৫  টাকা।  অথচ  পাঁচ  বছর  আগেও তা  ৩০  টাকায়  পাওয়া  যেত।  ২০০  পৃষ্ঠার  খাতার  দাম  ৫০  টাকা  থেকে  বেড়ে  এখন  ৮০  থেকে  ৯০  টাকা।  ৩০০  পৃষ্ঠার  খাতা  আগে  ছিল  ৮০  টাকা,  এখন  বিক্রি  হচ্ছে  ১২০  টাকায়।  বেড়েছে  স্কুলের  পোশাক  ও  স্কুলব্যাগের  দাম। পাশাপাশি বেড়েছে স্কুলের  টিউশন  ফিও।  তার  ওপর রয়েছে  কোচিং। সরকারি- বেসরকারি  মাধ্যমিক  স্কুলগুলোর একই চিত্র বিদ্যমান। শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষা খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোচিং  নীতিমালার  দোহাই  দিয়ে  স্কুলেও এখন  বাধ্যতামূলকভাবে  কোচিংয়ের আয়োজন  করছে ।  অনেকে  স্কুলেই  অতিরিক্ত  ক্লাসের  নাম  দিয়ে  ওই  কোচিং  করানো  হচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থী  ওই  কোচিং  করুক আর নাই করুক  তাকে  দিতেই  হয় নির্দিষ্ট  ফি।  এমনকি  অভিভাবকদের  কোচিং  করানোর  অনুরোধ-সংবলিত  একটি  আবেদনও  জমা  দিতে  বাধ্য  করা  হচ্ছে।  আর  কোনো  অভিভাবক  ওই  আবেদন  জমা  না  দিলে  তার  সন্তানকে  রীতিমতো  হেনস্তা করা  হচ্ছে।  অঙ্ক,  ইংরেজি  ও  বিজ্ঞানের  শিক্ষকের  কাছে  স্কুল  কিংবা  বাইরে  কোচিং  না  করালে  শিক্ষার্থীদের  কম  নম্বর  বা  ফেল  করিয়ে  দেয়া  হয়। তাছাড়া  শিক্ষার্থীদের  সঙ্গে  খারাপ  ব্যবহার  করা  হয়।  এমনকি  কিছু  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে  শারীরিক  ও  মানসিক  নির্যাতনের  ঘটনাও  ঘটছে। 

সূত্র জানায়, বিগত ২০১২  সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে  কর্মরত  শিক্ষকদের  কোচিং ব্যবসা  নিষিদ্ধ  করে  সরকার ‘কোচিং  বাণিজ্য  বন্ধের  নীতিমালা’  জারি  করে ।  ওই  নীতিমালা  অনুযায়ী কোনো  শিক্ষক  নিজ  প্রতিষ্ঠানের  শিক্ষার্থীকে  কোচিং  করাতে  পারবেন  না।  তবে  প্রতিষ্ঠানপ্রধানের  অনুমতি  নিয়ে  অন্য  প্রতিষ্ঠানের  সর্বাধিক  ১০  শিক্ষার্থীকে  প্রাইভেট  পড়াতে  পারবেন।  তবে  ওই  শিক্ষার্থীদের  নাম,  রোল  ও  শ্রেণি  সম্পর্কে  প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে  জানাতে  হবে।  ওই  নীতিমালা  রাজধানীসহ  দেশের  কোথাও  মানা  হচ্ছে  না। বরং  নীতিমালার  তোয়াক্কা  না  করে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রেণিকক্ষেই  চলে  কোচিং  বাণিজ্য।  যদিও গত  ১১  মার্চ  প্রাথমিক  শিক্ষা  অধিদপ্তরের  এক  আদেশ  বলা  হয়েছে,  সারা  দেশে  সব  সরকারি  ও  বেসরকারি  প্রাথমিক  বিদ্যালয়ে  ক্লাস  শেষে  ছুটির  পর  এবং  বন্ধের  দিনে  শ্রেণিকক্ষে  প্রাইভেট  পড়ানো  ও  কোচিং  করানো  যাবে  না। কিন্তু আইনে  নিষিদ্ধ  থাকলেও  রাজধানীতেই  চলছে  শিক্ষকদের  সহস্রাধিক  কোচিং  সেন্টার।  অধিকাংশ  কোচিং  সেন্টারে  ব্যাচে  শিক্ষার্থীদের  পড়ানো  হচ্ছে।  রাজধানীর  ভিকারুননিসা  নূন  স্কুল  অ্যান্ড  কলেজ,  আইডিয়াল  স্কুল  অ্যান্ড  কলেজ,  মোহাম্মদপুর  প্রিপারেটরি  স্কুল  অ্যান্ড  কলেজ,  ঢাকা  রেসিডেন্সিয়াল  মডেল  কলেজে,  মনিপুর  উচ্চ  বিদ্যালয়  ও  কলেজের  মূল  ক্যাম্পাস,  শাখা  ক্যাম্পাসগুলোর  আশপাশে  হাঁটলে  কোচিং  সেন্টারের  অসংখ্য  সাইনবোর্ড  চোখে  পড়ে,  যেগুলো  ওসব  প্রতিষ্ঠানের  শিক্ষকরা  চালান। রাজধানীর  শাহজাহানপুরে  রয়েছে  মতিঝিল  আইডিয়াল  স্কুলের  শিক্ষকদের  অনেক  কোচিং  সেন্টার।  উত্তরা  ব্যাংকের  গলিসংলগ্ন  এলাকার  বিভিন্ন  বাসাবাড়ি  হাজারো  শিক্ষার্থীর  কাছে  হয়ে  উঠেছে  স্কুলের  বিকল্প;  অনেকের  কাছে  শ্রেণিকক্ষের  চেয়েও  গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে