সাংবাদিক তুহিন হত্যা: পুলিশের অভিযানে ৫ জন আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম | প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম
সাংবাদিক তুহিন হত্যা: পুলিশের অভিযানে ৫ জন আটক

গাজীপুর মহানগরের ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তায় প্রকাশ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডের মূল সূত্রপাত হয় এক নারী ও এক যুবকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায়, যা মোবাইলে ধারণ করছিলেন তুহিন। ধারণা করা হচ্ছে, ভিডিও মুছে ফেলতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদ মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ-এর গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। পরিবারসহ পালের মাঠ এলাকায় বসবাস করতেন। দুই শিশুসন্তানের জনক তুহিন ইউনানি ওষুধ কোম্পানির স্থানীয় ডিলার হিসেবেও কাজ করতেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তুহিন ও তার সহকর্মী শামীম হোসেন ঘটনার সময় পাশের একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন। এক পর্যায়ে তারা দেখতে পান, এক নারীকে মারধর করছেন এক যুবক। তখন চার-পাঁচজন দুর্বৃত্ত অস্ত্র নিয়ে ওই যুবককে কোপাতে আসে। ঠিক সে সময় মোবাইলে ভিডিও ধারণ শুরু করেন তুহিন। দুর্বৃত্তরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে ভিডিও ডিলিট করতে বলে। তিনি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তাতে অস্বীকৃতি জানান।

এরপর তুহিন প্রাণ বাঁচাতে পাশের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। সেখানেই দুর্বৃত্তরা ঢুকে গলা, বুক, পিঠ ও কাঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে বৃষ্টির পানি ধুয়ে দেয় রক্তের দাগ, কিন্তু শোক মুছে যায়নি সহকর্মী ও স্বজনদের মন থেকে।

ঘটনার দিন রাতেই বাসন থানায় মামলা করেন নিহতের বড় ভাই সেলিম। তিনি অজ্ঞাত ২০–২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, “তুহিনের দুই সন্তানই অল্পবয়সী। আমরা গরিব পরিবার। তাদের দেখভাল করাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”

শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রবিউল হাসান জানান, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে ৪–৫ জন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে পাঁচজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি আরও জানান, “চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে তুহিন ভিডিও করছিলেন—এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। বরং ফুটেজের এক নারীকে পাওয়া গেলে পুরো ঘটনার প্রকৃত কারণ পরিষ্কার হবে।”

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রবিউল ইসলাম বলেন, “ফুটেজে দেখা যাওয়া ব্যক্তি ও নারী একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের সদস্য বলে আমরা ধারণা করছি। এই চক্র বাসন, ভোগড়া এবং চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সক্রিয়ভাবে ছিনতাই করে। এই নারী কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তুলে, তারপর দল মিলে টার্গেট করে ছিনতাই করে থাকে।”

তিনি জানান, এই চক্রের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। হত্যা ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সদস্যকে চিহ্নিত করে গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে শুক্রবার সকালে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে নিহত তুহিনের সহকর্মী সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেছেন। তারা দ্রুত বিচার ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এদিন বৃষ্টিভেজা চান্দনা চৌরাস্তার ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় তুহিনের জানাজা। ঘটনাস্থলের পাশে ভেসে থাকা রক্তের দাগ ধুয়ে গেলেও এলাকাবাসী ও সহকর্মীদের মনে তার মৃত্যু রেখে গেছে গভীর ক্ষতের স্মৃতি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে