মাদক, ইভটিজিং, কিশোর গ্যাং, বাল্যবিবাহ এবং নাগরিকের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সমাধান করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে উন্নত ও আধুনিক সাতকানিয়া গড়তে চান সম্প্রতি যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা পরিষদের প্রশাসক খোন্দকার মাহমুদুল হাসান।
এক বার্তায় তিনি এ অভিপ্রায় ব্যক্ত করে সাতকানিয়াবাসীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য আহ্বান করেছেন। তবে উক্ত বার্তায় কাউকে অহেতুক হয়রানির উদ্দেশ্যে অসত্য তথ্য না দেয়ার জন্যও সতর্ক করে দেয়া হয়।
ইউএনও'র এ আহবানকে স্বাগত জানিয়েছেন সাতকানিয়ার সচেতন মহল। দৈনিক দিনকাল প্রতিনিধি সাংবাদিক নুরুল ইসলাম আজাদ, দৈনিক আলোকিত প্রতিদিনের প্রতিনিধি সাংবাদিক জাবেদ এবং দৈনিক খোলা কাগজের প্রতিনিধি সাংবাদিক আবুল কাসেম আজাদ প্রমূখ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে আইনী পদক্ষেপ নিয়ে সাতকানিয়া হতে সব ধরণের অপরাধ নির্মূল করা খুব জরুরী। বিশেষ করে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিক সমাজ পাশে থাকবে।"
অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌর এলাকায় মাদকের কেনা-বেচা বৃদ্ধি পেয়েছে। বান্দরবান হতে বাংলা মদ, গাঁজা এবং কক্সবাজার হতে মদ, গাঁজা ও ইয়াবা নিয়ে আসে পাচারকারীরা। তারা সাতকানিয়াকে বানিয়েছে স্টক ও সেল্স পয়েন্ট। যোগাযোগ ও সংরক্ষণ সুবিধার কারণে বিভিন্ন পথে তারা মাদক এনে সাতকানিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপদে জমা করে। সেখান থেকে সুবিধামত পাচার করা হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প হতে পালিয়ে এসে মিয়ানমারের যেসব নাগরিক ভুয়া তথ্য দিয়ে এনআইডি বানিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছে তারাই মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদেরকে শেল্টার দেয় কিছু রাজনৈতিক নেতা। তারা এলাকার যুবক তরুণদেরকে মাদকে অভ্যস্থ করে তুলছে। এই কারবার করে অনেক রোহিঙ্গা এখন আলীশান বিল্ডিং, দোকান, মার্কেটের মালিক বনে গেছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে তাদেরকে নিয়ে নিজস্ব সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে থিতু হয়ে সাতকানিয়ায় প্রভাব বিস্তারকারী এক আওয়ামী ধনকুবের। তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমদের বন্ধু পরিচয় দিয়ে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করতেন। দখল করেছেন শত শত একর সরকারী জায়গা। গড়ে তুলেছেন মাদকের ভয়ঙ্কর আস্তানা। বর্তমানে তিনি পর্দার আড়ালে অবস্থান করছেন। প্রকাশ্যে লীড দিচ্ছেন তার এক প্রভাবশালী আত্মীয়।
সাতকানিয়ার পার্শবর্তী দোহাজারীর রোহিঙ্গা ক্যাম্প হতেও বিস্তর মাদক আসে সাতকানিয়ায়। ছদাহার পাহাড়গুলোতে রীতিমত মাদকের আখড়া গড়ে ওঠেছে। সেগুলোর নিয়ন্ত্রক কতিপয় জমিদার। তারা প্রচুর সরকারী জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছে নিজস্ব সাম্রাজ্য। সন্ধ্যার পর কেরানিহাট, বাজালিয়া, ঠাকুরদিঘি, বিওসির মোড়, দোহাজারী, সাতকানিয়া রেল স্টেশনসহ অনেকগুলো স্পটে মাদক বেচা-কেনা চলে। রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় অনেক মাদক কারবারীর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে ভয় পান এলাকাবাসী। অনেকে এখন নিজের পুরাতন পেশা বাদ দিয়ে অল্প বয়সী কিশোরদেরকে নিয়ে গ্যাং গঠন করে মাদকবাজিতে নেমেছে বলেও তথ্য মিলছে।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকবার মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সেনাবাহিনীও এসব অভিযানে যুক্ত ছিল। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে হরিণতোয়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি, সেনা সদস্যের পিতা আলহাজ মাওলানা মুহাম্মদ ফেরদৌস সওদাগর বলেন, "সাতকানিয়া হতে অপরাধ নির্মূলে ইউএনও মহোদয়ের উদ্যোগ আশা জাগানিয়া। পাশাপাশি উপজেলার প্রান্তিক জনপদসমূহের অনুন্নত রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।"
তিনি বলেন, "অনুন্নত, অবহেলিত, দূর্গম এবং অপরাধ প্রবণ এলাকাগুলোতে সরাসরি সরেজমিনে গিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ব্যাপক সুফল মিলবে।"